আবারো মেতে উঠলো জ্যাকসন হাউটস এর ডাইভার্সিটি প্লাজা। গত প্রায় এক বছর ধরে ডেমোক্রেটিক রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস পিপল আপ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের বিভিন্ন পর্বের প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশি আমিরকানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মাঝে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের প্রচারণায় ডাইভার্সিটি প্লাজা এখন এক অনন্য ক্ষেত্র। জাতীয় নির্বাচনের ১৬ দিন সামনে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনী সমাবেশ বা জিওটিভি র্যালির আয়োজন করলেন পিপল আপ প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে কুইন্স কাউন্টি কমিটি মেম্বার প্রার্থী ড. আবু জাফর মাহমুদ।
কেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হারিসকে ভোট দেবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কামালা হারিস জো বাইডেন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ পর্যন্ত যত উদ্যোগ নিয়েছেন তার সবগুলোই আমেরিকার সকল জাতিগোষ্ঠীর জন্য দৃষ্টান্তমূলক। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে ঘোষণা করেছেন, যাদের মেডিকেয়ার থাকবে, তারাই হোম কেয়ার সেবা পাবেন। আমরা মনে করি, এটি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। ভাইস প্রেসিডেন্ট যেভাবে আমাদের বৃদ্ধদের জন্য, গরিবদের জন্য, মধ্যবিত্ত এবং স্বল্পআয়ী মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন আমরা সবাই ভোট দিয়ে তার প্রতি সমর্থন জানাবো। তিনি বলেন, যারা লুটেরা তারা পৃথিবীর জায়গায় জায়গায় লুট করে চলেছে। তারা স্পষ্টভাবে বলেছে, ক্ষমতায় আসলে এদেশ থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেবে। অতীতেও অনেকরকম আস্ফালন করেছিল। সে কারণেই আমাদের সবাইকে সজাগ হতে হবে।
তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আমরা যত বেশি ভোট প্রদানে আগ্রহী হব, তত বেশি আমাদের নাগরিক মর্যাদা বাড়বে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হারিস এবার জিতবেন। জনগণের ভোট, ইলেক্টরাল ভোট ও উচ্চ পর্যায়ের সমঝোতায় আগাম ফলাফল আমরা পেয়েছি, তাতে কমালা হারিসের জয় সুনিশ্চিত।
আবু জাফর মাহমুদ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ডেমোক্রেটিক লাইনের প্রত্যেক প্রার্থীকে ভোট প্রদানের জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা যখন সিটিজেন হয়েছি, আমরা অঙ্গীকার করেছি আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণ করবো। পৃথিবীর যেখানেই হোক আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে চলতে হবে আমাদের। আমেরিকার বৈদেশিক নীতি, আমেরিকার অর্থনীতি, রাজনীতি সবকিছুর সঙ্গে নিজেদের বোঝাপড়া একীভূত করতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে বিশ্বনেতৃত্বের শক্তি উপলব্ধি করতে হবে। আমেরিকায় থেকে যারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা বিশ্বাসঘাতক। এটি কখনোই বিশ্বাসী ও অঙ্গীকারবদ্ধ নাগরিকের কাজ নয়।
এদিন খোলা প্রাঙ্গণে ঝলমলে আলো আর এলইডি মনিটরে তথ্যবহুল প্রচারণায় সাধারণ মানুষের জন্য ছিল অনেক প্রাপ্তির উপকরণ। কেন ভোট দেবেন ডেমোক্রেট প্রার্থীদের এ নিয়ে ছিল প্রামাণ্যচিত্র।
একে একে নির্বাচিত কর্মকর্তারা এসে যোগ দেন এই আয়োজনে। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভেন রাগা বলেন, এটিই প্রথম অফিসিয়াল কোনো নির্বাচনী সমাবেশে তার যোগদানের কথা। তিনি পিপল আপ বাংলাদেশি তথা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জন্য কী কী কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেসব বিষয় তুলে ধরে বলেন, এই সংগঠন নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছে, তারা ভূপৃষ্ঠের অতিতাপ নিয়ে কাজ করছে, তারা সশস্ত্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করছে, এখানকার ছাত্রদের অধিকার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর পক্ষে কাজ করছে, নাগরিকদের হোম কেয়ার ও সিডিপ্যাপ সেবা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করছে, সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ এখানে অসাধারণ নেতৃত্বের এক দৃষ্টান্ত। আমরা এই সংগঠনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করছি।
নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেস রোহাস নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার আছে, এটি তার ক্ষমতা। একইভাবে যিনি ভোটার নয়, তার ক্ষমতাও কম নয়। তিনি অবশ্যই প্রতিটি নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেবেন, প্রতিবেশীর দুয়ারে দুয়ারে যাবেন এবং ভোট চাইবেন। সবকিছুর সঙ্গেই তার অধিকার ও ক্ষমতা রয়েছে। প্রত্যেকেই এই ক্ষমতা প্রেয়োগ করার জন্য আহ্ববান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ছিলেন ইউএস কংগ্রেসওম্যান এওসি’র নির্বাচনী কর্মকর্তা পিয়া রহমান, ও অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগার চিফ অফ স্টাফ ভিক্টোরিয়া লেহী, ডেমোক্রেট রাজনীতিক, আগামীর কাউন্সিল ওম্যান প্রার্থী (ডিস্ট্রিক্ট ২১) এরিকা মনটাইয়া।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্রেট প্রার্থীদের পক্ষে এমন নির্বাচনী সমাবেশের আয়োজনকে সময়োপযোগী বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধীবৃন্দ। বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের, জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, গ্লোবালটাইমস এর সম্পাদক রিমন ইসলাম, এনওয়াই কাগজ এর সম্পাদক মনওয়ারুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মহিবুল্লাহ পলাশ প্রমুখ। তারা তুলে ধরেন নির্বাচনী সমীকরণ ও ডেমোক্রেট প্রার্থীদের জয়লাভের সম্ভাবনার কথাও।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল খোলা আকাশের নিচে মুক্তমঞ্চে সঙ্গীত আয়োজন। শীতের রাতে তরুণ শিল্পী আলভানের কণ্ঠের গানের মূর্ছনা মুগ্ধ করে দর্শকদের। পরে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের মাটির সুর নিয়ে আসেন বাউল শিল্পী কালা মিয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মিলন রহমান ও জয় বাংলাদেশ মিডিয়ার সাংবাদিক আদিত্য শাহীন।
এসএটি/আরএইচ