ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান (রুটিন দায়িত্ব)-এর উপস্থিতিতে মহাপরিচালক মহোদয়ের অফিস কক্ষের সামনেই ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্রির ফটোগ্রাফার মাসুম রানা, বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. হাসিবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এই ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে থেকেই , যখন ব্রিতে "যোগীতলা ষড়যন্ত্র" নামে একটি আলোচিত বিষয় উঠে আসে। চলতি মাসের শুরুর দিকে, ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান এবং ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুকুল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এআরডি বিভাগ, এবং ড. মো. গোলাম কিবরিয়া ভূয়া, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফএমপিএইচটি বিভাগ- এর সমর্থনে, প্রায় ৫০-৬০ জন ব্রি কর্মকর্তা-কর্মচারী গোপন মিটিং করে এবং বিদ্যমান ৫ আগস্টের পরবর্তী কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির বিপরীতে একটি নতুন সংগঠন গঠন করে।
এই সংগঠনটি গঠন করার মাধ্যমে মহাপরিচালক ড. খালেকুজ্জামান ব্রিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে, ড. হাবিবুর রহমান মুকুল এবং ড. গোলাম কিবরিয়া ভূয়া ব্রির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পদ-পদবী বণ্টন, অনৈতিক পদোন্নতি এবং টেন্ডার বাণিজ্যসহ অন্যান্য কর্তৃত্ব একচেটিয়া করতে তৎপর। তাদের এসব কার্যক্রমের লক্ষ্য হল ব্রির প্রশাসনিক কাঠামোতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করা।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ব্রির ডিজির অফিসের সামনে। ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখের বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ব্রির কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিংয়ে বসেন। মিটিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. মো. আনোয়ারুল, সিএসও, জিকিউএন বিভাগ, ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সিএসও, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, ড. মো. ইব্রাহীম, সিএসও, আরএফএস বিভাগসহ আরও কিছু বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তা। মিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে মিটিং কক্ষে প্রবেশ করেন ড. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুকুল, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনি রুম ত্যাগ করেন। বাহিরে অপেক্ষমাণ ছিলেন "যোগীতলা ষড়যন্ত্রকারী" গ্রুপের সদস্যরা। মুকুল তাদের সাথে গোপনে কিছু কথা বলে দ্রুত চলে যান। এর পর, ডিজির মিটিং শেষ হলে, উপস্থিত কর্মকর্তারা বের হয়ে আসার পরই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। যোগীতলা ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের সদস্যদের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি তৎক্ষণাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং শুরু হয় হাতাহাতি ও মারামারি। মারামারির ফলে ব্রির ফটোগ্রাফার মাসুম রানা, বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. হাসিবুল হোসেন, ইলেকট্রিক এটেনডেন্ট মো. আবু জাফর গুরুতর আহন হন। তাদেরকে সরাসরি আঘাত করেন মোঃ আবু তাহের এমএলএসএস, মোঃ শাওন খান, নিয়মিত শ্রমিক এবং আরো কয়েকজন। এই সহিংস ঘটনায় ব্রিতে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং যেকোনো মুহূর্তে আরও মারামারির আশঙ্কা রয়েছে।
গত ২১ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-এর মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে পরিচালক (গবেষণা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও, সুকৌশলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তিনি পরিচালক (গবেষণা) পদে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। এর ফলে, বর্তমানে তিনি একে অপরের পরিপূরক দুটি পদ- মহাপরিচালক এবং পরিচালক (গবেষণা)- দখল করে আছেন। ব্রি-এর জেষ্ঠ্য তিনজন চীফ সাইন্টিফিক অফিসার (সিএসও)- ড. আমিনুল ইসলাম, ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং ড. মুন্নুজান খানমকে বাদ দিয়ে, নিজেদের মনগড়া সিনিয়রিটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে একটি জটিলতা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এর ফলে, পরিচালক (গবেষণা) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, অন্য কোনো নেতা যাতে ডিজির বিরুদ্ধে কিছু বলতে না পারে, তার জন্য ডিজি একটি বিশেষ গ্রুপ তৈরি করেছেন, যা তার প্রভাব এবং কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সহায়তা করছে।
ইতিমধ্যে, বর্তমান মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, ড. হাবিবুর রহমান মুকুল এবং ড. গোলাম কিবরিয়া সম্পর্কে বেশ কিছু জাতীয় ও অনলাইন সংবাদপত্রে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে ব্রির মতো একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। এর পাশাপাশি, ব্রিকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হলে ড. মুকুলের দৌরাত্ম্য এবং ড. গোলাম কিবরিয়ার অপকর্ম রোধ করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট সকলেই মনে করছে। এ অবস্থায় ব্রির ডিজি পদে দ্রূত পরিবর্তন এনে সকল অপরাজনীতি বন্ধ করা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি।