• অভিভাবকহীনতার সংষ্কার কাজ
• নীতিমালা মানে না কোনো প্রতিষ্ঠান
• সড়ক থাকার কথা ২৫ শতাংশ, আছে ৭ শতাংশ
নগর উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলে সারা বছর। কখনো ওয়াসা, কখনো বা সিটি করপোরেশন। রাস্তা বন্ধ করে উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়িতে চরম দুর্ভোগে জনজীবন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাইনবোর্ড লাগানো হলেও এই সময় যে কত দিনের তা আসলে কাগজে কলমে নেই। উন্নয়ন কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে সময় বেধে দিলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, যমুনা ফিউচার পার্কসহ অধিকাংশ এলাকাতেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি কাজ। রাস্তার একাংশ বন্ধ করে খোঁড়াখোঁড়ি করায় ছোট হয়েছে সড়ক, লেগেছে তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামীরা।
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সালমা শান্তা দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিন রাস্তা সংস্কারের কাজ চলতেই থাকে। আজ এই প্রতিষ্ঠান তো কাল অন্য প্রতিষ্ঠান। এভাবেই চলে সারা বছর। কাজের ক্ষেত্রে নির্দেশনা থাকলেও কেউই সেটা মানতে চায় না। বরং নিজেদের দাম্ভিকতা কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে।’
তথ্য বলছে, ঢাকায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ শতাংশ রাস্তা দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মেইন রোড আছে ৩ শতাংশ। এই ৩ ভাগের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে দখলদাররা। আবার উন্নয়ন কাজে খোঁড়াখুঁড়িতে সড়ক দখল হওয়ায় অবস্থা আরও বেগতিক।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুমে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোনো সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। সড়ক কাটাও যাবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খননকাজ শুরু করলে মূল খরচের পাঁচ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলেও দিতে হবে জরিমানা। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে এমন বেশ কিছু বিধান রেখে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কাগজে-কলমে নীতিমালা করা হলেও তা মেনে চলার বালাই নেই। অথচ রাজধানীজুড়ে চলছে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি।
রাজধানীর বুকে ক্ষতবিক্ষত সড়কের তালিকা করলে হয়তো বর্তমানে প্রথমে থাকবে বাড্ডা সড়ক। প্রতিদিন হাজারও যানবাহন আর কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান এ রাস্তাটির বেহাল দশা মাস তিনেক ধরে। উন্নয়ন কাজে নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হলেও অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে এখনও শেষ হয়নি প্রকল্পের অর্ধেক কাজ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ থাকলেও পরিত্রাণ মিলছে না।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা স্বাধীন শেখ দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। উন্নয়ন কাজে রাস্তা কাটার জন্য যে কি পরিমাণ কষ্ট করতে হয়, তা বলার ভাষা রাখে না। রাস্তায় রিকশা ও বাসের আলাদা কোনো লেন নেই। একই রাস্তায় চলাচল করতে হয়। এছাড়া রাস্তার অধিকাংশ অংশ বন্ধ করে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তাই গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগছে। বাসে বসে থাকতে হয় দীর্ঘসময়। নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ নগরবাসীর যেন ললাট লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের নামে এ দুর্ভোগ থেকে তাদের রেহাই মিলছে না। উন্নয়ন অবশ্যই দরকার। তবে উন্নয়ন নগরবাসীকে খুব বেশি দুর্ভোগে না ফেলেও করা যায়। দুঃখের বিষয়, এ বিষয়টি কখনোই আমলে নেয়া হচ্ছে না। যখন খুশি তখন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীর পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে নগরবিদ স্থপতি আদিল মো. খান বলেন, ‘যতক্ষণ-না পর্যন্ত আমরা বাধ্য করতে পারব সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সড়ক খনন হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংস্থাগুলো নামমাত্র ফি-র বিনিময়ে এ রাস্তা কাটতেই চাইবে। এতে জনগণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে আর ট্যাক্সের টাকা হরিলুট হচ্ছে।’