যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া কথিত ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে উঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পরে ডিএমপির নিউমার্কেট থানা পুলিশ মো. আজিজ মোল্লা নামের ওই প্রতারককে গ্রেফতার করে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে 'Anna Harrison' নামক ফেসবুক আইডির সাথে মো: নুরুজ্জামান এর যোগাযোগ হয়। সেই ব্যক্তি বাদীকে একটি হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলে। হোয়াটসঅ্যাপে সে বাদীকে জানায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি. মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের এলাইনস ব্যাংকে বেলটনের পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে।
সে বাদীকে উক্ত মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলে এবং এলাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের আরেকটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়। Anna Harrison তার বানানো ম্যাসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলে। তারপর বাদীকে সে তার কথিত আইন উপদেষ্টার নাম্বার দিলে বাদী তার সাথে যোগাযোগ করে। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার প্রেরণ করতে বলে। পরবর্তী সময়ে Anna Harrison ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ বাদীকে প্রদান করে।
পুলিশ আরও জানায়, পরবর্তী সময়ে কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার ৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির নিকট ২ টি লাগেজ প্রদান করেছে বলে বাদীকে জানায় এবং প্রমাণ স্বরূপ একটি ভিডিও দেখায়। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ এবং ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রদান করার কথা বললে বাদী তার কথা মতো ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে।
এরপর গত ৩ অক্টোবর সকাল আটটায় একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। এরপর বাদীর দুটি লাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানায়। লাগেজ দুটি ছাড়াতে চার লাখ সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তাদের কথা মতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা প্রদান করে। এরপর বাদী কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথা মতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরো ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে প্রদান করে। এসব টাকা প্রদান করার পরও তারা বাদীর কাছে আরো ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়। এভাবে বার বার টাকা চাওয়ায় বাদীর সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সাথে যোগাযোগ করে।
পরে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সবমিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় বাদী মো. নুরুজ্জামানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে ১২ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় একটি প্রতারণার মামলা করা হয়।
তদন্তাধীন এই মামলায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামক একটি অফিস থেকে মো. আজিজ মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে নয়টি ব্যাংকের নয়টি চেক বই, তিনটি এটিএম কার্ড, দুইটি ভিসা কার্ড ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ মোল্লা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
এসএটি/আরএইচ