স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং মাস্টাররোলে কর্মরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের রাজস্বখাতভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাইকোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুয়ায়ী এসব কর্মচারীর চাকরি রাজস্বখাতভূক্ত করা হচ্ছে। এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, মাস্টাররোল, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে ৩ হাজার ৩৯১ জনকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৬০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শূন্যপদে এবং ১ হাজার ৯৩১ জনকে পর্যায়ক্রমে পদ খালি হওয়া সাপেক্ষে নিয়মিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং মাস্টাররোলে কর্মরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ৩০৯২ জন। সে সময়ে শূণ্যপদ না থাকায় রায়প্রাপ্ত অবশিষ্ট ৩৪৪১ জন কর্মচারীকে নিয়মিত করা যায়নি। বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর ১৪৬০টি পদ শূণ্য হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মহামান্য আদালতে আপীল বিভাগের আপীল নং-৪৬০/২০১৭ এরং ২জুলাই ২০১৯ তারিখের রায়ের আনুসরণে মামলার রায়প্রাপ্ত ৩৩৯১ জনের মধ্যে উল্লেখিত ১৪৬০টি শূন্যপদে এবং অবশিষ্ট ১৯৩১ জনকে পরবর্তীতে পদ শূন্য হওয়া সাপেক্ষে নিয়মিতকরণের বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আপীল বিভাগের আপীল নং-৪৬০/২০১৭ এর রায় প্রস্তাবিত নিয়মিতকরণে কোন বাধার সৃষ্টি করে না।
যেহেতু নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত মামলাগুলির কার্যক্রম উক্ত ৪৬০/২০১৭ মামলার রায়ের পূর্বেই আপীল বিভাগ কর্তৃক নিষ্পত্তি হয়েছে। তাছাড়া একই মন্ত্রণালয়ের অধীন সমবায় অধিদপ্তরকে একই ধরণের মামলায় রায়প্রাপ্তদের নিয়মিতকরণে ৪৬০/২০১৭ মামলা কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কিনা এই মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে আইন মন্ত্রণালয় জানান যে, যেহেতু নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত মামলাগুলি ৪৬০/২০১৭ মামলার রায় প্রকাশের পূর্বেই আপীল বিভাগ কর্তৃক নিষ্পত্তিকৃত বিধায় ৪৬০/২০১৭ মামলার রায় নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা সমীচিন হবে না। নিয়মিতকরণ মামলায় রায়প্রাপ্ত কর্মচারীদের আংশিক নিয়মিতকরণ করে বাকীদের নিয়মিতকরণ না করা এতদসংক্রান্ত রায় বাস্তবায়নে বৈষম্যের শামিল যা সংবিধানিক মৌলিক অধিকারেরও লংঘন। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, এই নিয়োগ বাস্তবায়ন হলে জ্যেষ্ঠতা সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হবে না যেহেতু নিয়মিতকরণকৃত কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতা নির্ণয় সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। এবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় অনুয়ায়ী এসব কর্মচারীর চাকরি দিচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রৌকশলী মোঃ ফিরোজ আলম তালুদার দি সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলি আখতার হোসেন এই অমিমাংসীত মানবিক বিষয়টি পুনরায় মন্ত্রনালয়ে পাঠান। আশা করি উপদেষ্টা এ.এফ হাসান আরিফ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সমাধান করবেন। এতে করে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন থেকে মুক্তি পাবে। অপর দিকে ইউডিসিজিপির উপ-প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল হাসানের আমলে আদালতের রায়ের বিষয়গুলো মন্ত্রনালয়ে আবেদন প্রেক্ষিতে তৎকালীন সময়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেন। সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলী মাষ্টাররুল ও প্রকল্পর কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহন করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বৈষম্যের শিকার ৩৩৯১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানন্তরের জন্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সিদ্বান্ত নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলি আখতার হোসেন তার দপ্তরে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের উপদেষ্টার নির্দেশে এলজিইডিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং মাস্টাররোলে কর্মরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের রাজস্বখাতভুক্ত করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিগত সময় রাজস্ব খাতে স্থান্তরের চেষ্টা করা হলেও কিছুটা আইগত জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ পরিপেক্ষিতে নতুন ভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রয়োজনে সংস্থাপন ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আমি আশাবাদি।