লঘুচাপের প্রভাব, টানা ভারী বর্ষণ, ফের বন্যার কবলে পড়ছে নোয়াখালীবাসী। গত কয়েকদিনে পানি কমলেও শুক্রবার রাত থেকে থেমে থেমে চলমান বৃষ্টিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বন্যার পানি। এতে আতঙ্কিত হচ্ছেন পানিবন্দি ও বানভাসী মানুষ।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে খবর নিয়ে জানা যায়, নিম্নাঞ্চলগুলো ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্লাবিত হয়েছে। ডুবে আছে বসতঘর ও সড়ক। বসতঘরে পানি ওঠায় অনেকেই ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নতুন করে জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যার পানি।
জানা যায়, নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলায় গত ১৫ দিন বন্যার পানি স্থানীয় জলাবদ্ধতায় রুপ নেয়। এতে এখনো পানিবন্দি রয়েছে ১১ লক্ষ ৫৫হাজার মানুষ। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৫হাজার ৪৪১জন মানুষ অবস্থান করছে।বন্যায় এপর্যন্ত ১১জনের মৃত্যু হয়েছে।
সদর উপজেলার কাদির হানিফের কৃষ্ণ রামপুর গ্রামের খলিল বলেন, বন্যার পানি আবার বাড়ছে। মানুষ জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। গত বন্যায় আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়িতে এসেছি আজ ৬ দিন। অনেক কিছু গুছিয়ে বসবাসের উপযোগী করেছি। গতকালের বৃষ্টিতে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে আবার যেতে হতে পারে। আল্লাহ রক্ষা না করলে আমাদের আর কিছুই করার নাই।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার দিনে তেমন বৃষ্টি হয়নি। কেবল রাত থেকে চলমান বৃষ্টিতে পানি বেড়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্তমানে সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এখানকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় হাতিয়ার প্রায় ১০টি ট্রলার ডুবে গেছে। এতে করে এখনো ৩০ জনের অধিক জেলে নিখোজ রয়েছে । বর্তমানে দ্বীপ হাতিয়ার সাথে আমাদের সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার নিন্মাঞ্চলীয় উপজেলা গুলোতে কোথাও ৪-৫ ফুট পযন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশিত হওয়ার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় জলাবদ্ধতার পানি নামছে খুবই ধীর গতিতে। এজন্য স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, নোয়াখালীতে বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা আগে থেকেই ছিল। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে জেলা প্রশাসন আগের মতই মানুষের পাশে দাঁড়াবে।