বরিশাল নগরীর উত্তর অক্সফোর্ড মিশন রোড এলাকা। সেখানেই দেখা মেলে 'পান্না প্যালেস' নামে সুউচ্চ ভবনের। বাড়িটির সদর দরজার ওপরে বেশ বড় করে লেখা 'বাড়ির মালিক মোঃ মনির হোসেন মিয়া'। ৫ই আগস্টের পূর্বে এই ভবন মালিক ছিলেন ভোলার সদর থানার ওসি মনির হোসেন। এর আগে জেলার আরো দুটি থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম আর দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে একাধিকবার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তৎকালীন সরকারের এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের জোরে বারবার বেঁচে গেছেন বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর ওসি মনিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন এক ভুক্তভোগী। সেখানে অভিযুক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা এবং তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের বিবরণী তুলে ধরা হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পান্না প্যালেস নামে এই বাড়িটি ছাড়াও বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এবং আমতলা মোড় এলাকায় তার এবং স্ত্রী শাহনাজ পান্নার নামে রয়েছে একাধিক জমির প্লট। বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার উত্তর কাজলাকাঠি গ্রামে রয়েছে বিশাল ফার্ম হাউস।
ওসি মনিরের চেয়ে বিত্ত বৈভবে পিছিয়ে নেই তার স্ত্রী শাহনাজ পান্না। কোনো ধরনের উপার্জনের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তার নামে রয়েছে প্রাইভেট কার, ১৩০ ভরি সোনা এবং জমি। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভোলার চরফ্যাশন এবং বোরহানউদ্দিন থানায় দায়িত্ব পালনকালে এভাবে অর্থ সম্পদের পাহাড় তৈরিতে সক্ষম হন ওসি মনির ও তার পরিবার।
অভিযোগ আছে জুয়ার আসর ও সরকারি অভিযানের আটককৃত ইলিশ বিক্রি করেও মাসোহারা নিতেন তিনি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চরফ্যাশন থানায় থাকাকালীন স্থানীয় আমিনাবাদ ইউনিয়নের কুলছুমবাগ গ্রামের ফাতেমা বেগম মনির হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে মেয়েকে থানায় আটকে রেখে চাঁদাদাবির অভিযোগ করেন।
এরপর বোরহানউদ্দিন থানায় দায়িত্ব পালনকালে ২০২৩ সালে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভোলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদের সুপারিশে কমিটির তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। পরবর্তীতে তাকে ভোলা সদর থানায় পদায়ন করা হয়। তবে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলে বদলে গেছে ওসি মনিরের ক্ষমতার চিত্র। বর্তমানে তাকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দুদুক বরিশাল কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এইচ এম আক্তারুজ্জামান জানান, মনির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করা হয়েছে। সেখানে তার সম্পদের অসামঞ্জস্যতার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবগত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে মনির হোসেন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মিটিং এ আছেন জানিয়ে পরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান। পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে গত সোমবার তার স্ত্রী শাহনাজ পান্নার ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি ফোন কেটে দেন।