ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন হিমেল আহমেদ। প্রায় ৪ বছর চাকরির পেছনে ছুটে ব্যর্থ হন। সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে গিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার। আর সেই সিদ্ধান্তই যেন জীবনের চাকা ঘুরে দিয়েছে হিমেলের। এরপর আর পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি। নিজেই তৈরি করেছেন কর্মসংস্থানের। প্রজেক্টের নাম দিয়েছেন ‘হিমেল অ্যাগ্রো ফার্ম’।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বেইলা গ্রামের জোয়াহের আলীর ছেলে হিমেল আহমেদ। ছাত্র জীবন থেকেই গাছের প্রতি অগাধ আগ্রহ। বিভিন্ন ফলজ গাছ কিনে প্রিয় মানুষদের উপহার দিতেন। নিজেও সংগ্রহ করতেন এসব গাছের চারা।
হিমেলের বাগানে দেখা যায়, ঘাটাইল উপজেলার বেইলা গ্রামে প্রায় ২৮ বিঘা জমিতে কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন হিমেল। সেখানে রয়েছে ড্রাগন, কলা, লেবু ও টপ লেডি জাতের পেঁপে। বাগানের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা এবং বাড়ির ছাদে রয়েছে নানা ধরনের ফলজ বৃক্ষ।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিমেল আহমেদ বলেন, আমি ২০২০ সালে মাস্টার্স শেষ করার পর বিভিন্ন জায়গায় চাকরি জন্য খোঁজাখুঁজি করি। কিন্তু চাকরি না পেয়ে করোনা মহামারির সময় বাড়িতে চলে আসি। এরপর উদ্যোগ নেই কৃষি প্রজেক্ট করার। ছোট বেলা থেকে কৃষির দিকে আগ্রহ ছিল বেশি। আর সেই চিন্তা ও আগ্রহ থেকে কৃষির সাথে পথ চলা শুরু করি। আর সেই পথ চলাই আমার বেকার জীবন দূর করেছে। প্রথমে শখের বসে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে একটি ড্রাগন গাছ লাগাই। সেই গাছে ভালো ফল আসে তারপর আরও ১’শ ড্রাগন গাছ লাগাই। ওই ১’শ গাছেও ফল ভালো আসে, দামও ভালো পেয়েছিলাম। ড্রাগন ফলে লাভের পরিমাণ ভালো পাওয়াতে পরবর্তীতে আরও ১৫’শ ড্রাগনের গাছ লাগাই। বর্তমানে ৯ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগনসহ অন্যান্য ফলের বাগান করেছি। ‘হিমেল অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামের এই বাগানে ড্রাগনের পাশাপাশি কলা, পেঁপে ও লেবু বাগানও রয়েছে। এখান থেকেই ভালো টাকা আয় করতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, বাগানে এ বছরই প্রথম ড্রাগন ফল ধরেছে। ১৫’শ ড্রাগন গাছে আমার মোট খরচ হয়েছে ১৭ লাখ টাকার মতো। ইতোমধ্যেই ড্রাগন ফল বিক্রি করে খরচের টাকা উঠে গেছে। বাগান থেকে আরও ৩-৪ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করতে পারবো। এই ফল বিক্রিতেও কোনো ভোগান্তি ও ঝামেলা নেই। বাগান থেকেই পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়।
হিমেল বলেন, আমার বাগানে প্রতিদিন ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তারাও এখানে কাজ করে ভালোভাবে চলতে পারছে পরিবার নিয়ে। আমার চাকরির প্রতি এখন আর আগ্রহ নেই। চাকরির থেকে ভালো টাকা পাচ্ছি আমার এই বাগান থেকে। এখন নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। নিজেও সুন্দর ভাবে পরিবার নিয়ে চলতে পারছি। এখানে প্রতিদিনই আমার বাগান দেখতে স্থানীয় উপজেলা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলার লোক আসে। অনেকেই এমন বাগান করতে চায়। আমিও তাদের পরামর্শ দেই। যারা শখের বসে বাগান করতে চান তাদের আমি দু-একটি করে ড্রাগন গাছ ফ্রিতেই দেয়। আমার আগামীতে আরও বড় পরিসরে বাগান করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আরও আগাতে পারতাম।
হিমেলের বাগান দেখতে আসা ফরিদ মিয়া বলেন, হিমেলের বাগান দেখতে প্রতিদিন অনেক লোক আসে। হিমেল পাহাড়ি এলাকার সুপরিচিত একজন কৃষি উদ্যোক্তা। যদি কৃষি অফিস পরামর্শ ও সহযোগিতা করে তাহলে আমারও একটি বাগান করার পরিকল্পনা আছে।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, হিমেল একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। যদি কেউ এমন বাগান করতে চায় তবে কৃষি বিভাগ থেকে আমরা শতভাগ পরামর্শ ও সহায়তা করবো।
এসএটি/আরএইচ