স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা। ৬০ এর দশকে পল্লীপুর্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও সময়ের পরিক্রমায় এর পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের সীমানায় রয়েছে এলজিইডি'র বিশাল কর্মযজ্ঞ। পল্লী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এলজিইডি যে অবদান রেখেছে তা আজ দৃশ্যমান।
দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি অর্জনে এসব অবকাঠামোর অবদান অপরিসীম। প্রত্যন্ত পল্লীর মানুষ আজ সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে পল্লীর এসব অবকাঠামো ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ দি সাউথ এশিয়ান টাইমস কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অন্তর্বর্তী সরকারের স্হানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পরামর্শে এলজিইডির উন্নয়ন ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন,এই মূহুর্তে এলজিইডিতে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে,নতুন নতুন প্রকল্প নেয়া প্রয়োজন এবং যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প পাইপলাইনে আছে সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করা এবং ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের সাথে অংশীদারিত্বের কাজগুলো নেগোসিয়েশন প্রয়োজন।তবে বর্ষার কারণে কিছু বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।
এজন্য অনেক কাজ বাস্তবায়ন করা যায়নি এখন শুষ্ক মৌসুমে দ্রুত এগুলো বাস্তবায়ন করে ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের নজরে আনতে হবে।এছাড়া আমাদের এলজিইডির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার প্রকল্প চলমান।
যেসকল এলাকায় ৫০-৬০ বছর যাবৎ বিদ্যালয় আছে, কিন্তু বিদ্যালয়ের কাগজ পত্র সরকারের নামে অথচ আমরা যখন পুরনো স্কুল ঘর ভেঙে নতুন ভাবে স্কুল ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার করা উদ্যোগ নিয়েছি ঠিক তখনই এলাকার লোকজন বাধা দিচ্ছে এই জমির মালিক নিজেদের দাবী করে মামলা করে দিচ্ছে।এরকম প্রায় ৭০ টি স্কুলের জমির মামলা সংক্রান্ত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ব ব্যাংক বলছে ,আমরা স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের জন্য শিক্ষা খাতে আরো ৭০০ মিলিয়ন টাকা দিব অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকা ।তবে চলমান কাজ গুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন,এই সকল সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আমরা আমাদের মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসন, স্হানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা চলমান রেখে সমাধানের চেষ্টা করছি। বিশ্ব ব্যাংক ও এডিবি এলজিইডির কাজের গুণগত মানে সন্তুষ্ট বলেই তাঁরা আমাদের সাথে কাজ করতে চাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,সুপার ব্রীজ প্রকল্পেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে ।কারণ জমি অধিগ্রহনের এলজিইডি তে সরকারের টাকা বরাদ্দ নেই। এ কারণেই আমরা প্রতিনিয়ত জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছি। এ প্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি।
কাজের সার্বিকমান গুণগত মান নিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এলজিইডির কাজের গুণগত মান নিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এডিবির কোন আপত্তি নেই,কাজের মান নিয়ে তারা যথেষ্টই সন্তুষ্ট। তবে তৃণমূল পর্যায়ে যারা তদারকের দায়িত্বে আছেন তারাও কাজের মান রক্ষার্থে আন্তরিক এবং কনসাল্টাও এ ব্যাপারে সতর্ক।আমরা কাজের গুনগত মান ও টেকসই উন্নয়নে বদ্ধপরিকর।
কিন্তু ৫ই আগস্ট প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আওয়ামীলীগ সরকার সমর্থিত ঠিকাদার রা পালিয়েছে,এ কারণে কাজের গতি কিছুটা বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমাদের নজরে আসলে সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এলজিইডি র আলোচিত পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন কর্মকান্ডের অনিয়ম ও অনৈতিকতা সম্পর্কে এলজিইডি'র প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে এলজিইডি'র কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচিত, সমালোচিত ও নিন্দিত জেলা পিরোজপুর।
এ জেলার কর্মযজ্ঞ নিয়ে আমরা তদন্ত করছি দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি করে তদন্ত চলছে,সচিব মহোদয়ের সাথে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করে যাচ্ছি।মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা এ জেলার কর্মকাণ্ড নজরদারি করছে।
সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আমি আশাবাদী।। পিরোজপুর জেলার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন,রঞ্জিত দে কে বদলি করা হয়েছে তবে তার জন্য কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তদবির করছেন তবে পিরোজপুর জেলায় যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক দায়িত্ব পালন করবেন। তবে পুরাতন রা সবকিছু অবগত থাকেন এতে দ্রুত কাজ করতে পারেন কিন্তু নতুনদের একটু সময় লাগলেও তাদের কোন বিতর্ক থাকেনা।