সেকান্দর আলী, (ময়মনসিংহ)
শনিবার সকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো: ইউসুফ আলী। প্রধান অতিথি বলেন, আমাদেরকে একটি হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ জাতিতে পরিণত করার জন্য ১৪ই ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যা ঘটিয়েছিল। ১৬ই ডিসেম্বরে আমাদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল জেনেই বিজয়ের দুইদিন আগে তারা ভিন্নরুপ চিন্তা করেছে, এই দেশ যদি স্বাধীন হয়, এই দেশ যদি টিকে থাকে তাহলে অনেকের সমস্যা হবে এবং এই জন্য জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রয়াস থেকে এই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
কবি সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর, তাদেরকে রাতের অন্ধকারে ধরে এনে হত্যা করে এ দিনটিতে। আমরা রায়েরবাজার বধ্যভূমির ছবিগুলো দেখেছি, কী বীভৎস ছবি, হাত বাধা অবস্থায়, চোখ বাঁধা অবস্থায় শরীরে বুলেটের ক্ষত লাশ পড়ে আছে। এরকম একটি অবস্থা আমরা এ বছরও দেখেছি। হায়েনারা, শকুনেরা সবসময় থাকে মহান কোনো অর্জনকে, ভালো কোনো অর্জনকে, নৎসাত করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এ দেশের মানুষ একাত্তরে যেরকম প্রতিরোধ করেছে, আবারো সময়ের প্রয়োজনে তারা রুখে দাঁড়িয়েছে। আমরা বুদ্ধিজীবীদের হারিয়েছি, তাদের যে উদ্দেশ্য ছিলো, মেধা ছিলো, শ্রম ছিলো সেটির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আমাদেরকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই ভূমিকাটা পালন করতে হবে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম সভাপত্বির বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আমাদের উপর তাদের সাংস্কৃতিক গোলামী, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নিপীড়ন চালিয়ে দিয়েছিল, যার ধরুন এদেশের মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারা বাঙ্গালীদের উপর বিভিন্ন হামলা, মামলা ও নিপীড়ন চালিয়েছিলো কিন্তু বাঙালি কখনো থেমে থাকেনি। বাঙালিরা সবসময় অন্যায়, অসত্য এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবাদ করেছে।
তিনি আরো বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথ অনুসরণ করে সমাজ ও দেশ গড়তে পারলেই তাঁদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। দেশপ্রেমের আদর্শে বলীয়ান হয়ে দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গঠন, জনসাধারণের সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর, উন্নত, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা একসাথে কাজ করব। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে একটি স্বাধীন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত ডিআইজি শরিফুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার আজিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শামসুদ্দিন।
আলোচনা সভায় বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হতে আগত সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ নগরবাসী উপস্থিত ছিলেন।