স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ফজলুর রহমান বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে তিনি মন্ত্রনালয়ে ১৫ বছরই সিনিয়র সহকারী সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। গত ৫ই আগস্ট এর প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর এক মাসের মধ্যে তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আসেন।
মোঃ ফজলুর রহমান ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বরত হওয়ার পর তার দপ্তরে ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি দি সাউথ এশিয়ান টাইমস কে বলেন, তাসকিন এ খান ঢাকা ওয়াসায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরির সমস্ত বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে একটানা দীর্ঘ বছর চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এটা সরকারি বিধি-বিধান কোনটাই সমর্থন করে না,যে কারণে কোন ব্যক্তি একই পদে দীর্ঘদিন থাকলে তখন তার একটি অ্যাবসুলেট পাওয়ার থাকে সেক্ষেত্রে করাপশন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার বলেন তা সব জায়গায় হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসায় ও এই অনৈতিক অপরাধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার যুক্ত সমস্ত ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটেছে,যা রাষ্ট্র এবং জনস্বার্থ পরিপন্থী।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসায় কিছু উচ্চবিলাসী প্রকল্পসমূহ আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে ট্রাস্টস ফোর্স ভিত্তিক কমিটি গঠন করে দিয়েছি এদের মতামত নিয়ে কাজ করা হবে। এছাড়া রেভিনিউ কালেকশনের বিষয় অনেক গরমিল আছে এ বিষয়েও একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি এবং বিদেশে যাওয়ার একটি প্রবণতা আছে এ ক্ষেত্রেও কমিটি করে দিয়েছি যাতে বিদেশ ভ্রমণের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা প্রয়োজন ও গুরুত্ব সাপেক্ষ মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া।
অপরদিকে রাজস্ব খাত সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে তিন বৎসরের অধিক যারা কর্মরত আছেন তাদেরকে বদলির জন্য চিন্তা ভাবনা করেছি, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে লটারির মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা হবে। গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সরকারের বিধি-বিধান লঙ্ঘিত না হয়,সে বিষয়ে দৃষ্টি রেখে গাড়ি ব্যবহার করার দিকনির্দেশনা দিয়েছি।বিগত সময় যারা বৈষম্যের শিকার ও সুবিধাবঞ্চিত হয়েছে এদের জন্যও কমিটি করে দিয়েছি। যা তারা নিরীক্ষা পূর্ব নিয়মকানুন মেনে বৈষম্য ও সুবিধা বঞ্চিত প্রত্যেককে সমান সংখ্যক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।বিগত সময় অনৈতিক প্রভাবের কারণে বিভিন্ন অনিয়ম ঘটেছে, আমি এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি, যে কোন বিষয়েই আইন ও বিধি-বিধান লংঘন করা যাবে না, এ ব্যাপারে মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় যথেষ্ট সতর্ক ও সহমত।
ঢাকা ওয়াসার এমডি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রাজধানী ঢাকা সহ এত বড় সিটি মেইনটেইন করতে হয়। এজন্য ঢাকা ওয়াসায় একজন সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দরকার। কারণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিগত সময়ের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে,সে ক্ষেত্রে নতুন করে বিধান অনুযায়ী সার্কুলার দিয়েছি। চাকরিবিধি অনুসরণ করেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। দুদক থেকে বিগত সময়ের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তদন্তের জন্য আমাদের সহযোগিতা চাচ্ছে, এ বিষয়ে আমরা তাদেরকে সব ধরনের দ্রুততম সময়ের মধ্যে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।আমি এসেই কন্টাকটারদের নতুন করে এনলিস্টেড হওয়ার সার্কুলার দিয়ে সকলকে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ করে দিয়েছি ।সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলে ঠিকাদারগণ যাতে ২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের দরের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। কারণ বিগত ১৫ বছরে অনেক ঠিকাদারই কাজ করতে পারে নাই বলে তাদের কোন কাজের অভিজ্ঞতা নাই, আমি মনে করি বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ঠিকাদারদের কাজ করার সুযোগ হওয়া উচিত।
বর্তমানে সকল ঠিকাদারগণই তিন কোটি টাকা পর্যন্ত পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছাড়াই যে কোন কাজের টেন্ডার এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন। রাজধানী ঢাকার নগরবাসীর সুপেয় পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, ঘন জনবসতি পূর্ণ এ ঢাকা শহরে আমি জানতামই না যে,ড্রেনেজ ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ট সংকট রয়েছে এতে করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যার তুলনায় ঢাকা ওয়াসা ২০% সমস্যা সমাধান করতে পারে,এজন্য আমি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি যেগুলো বাস্তবায়িত হলে রাজধানীতে বসবাসরত ৮০ ভাগ মানুষের সুপেয় পানি ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সমস্যার সমাধান হবে। সুয়ারেজ সিস্টেম ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গতিশীলতা বৃদ্ধি করে দ্রুতগতিতে কার্যক্রম সমাপ্তির জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছি। বিগত ১৫ বছরে যে অপশাসন,
অনিয়ম,অন্যায় ও দুর্নীতি মূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে তা হঠাৎ করেই সমাধান সম্ভব নয়।এক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পদক্ষেপ ভিত্তিক কর্ম কৌশল অবলম্বন এবং সকলের সহযোগিতা নিয়ে ঢাকা ওয়াসা কে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের রূপান্তরিত করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।