স্বৈরাচার বিরোধী এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০০ জনের বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৬টি দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, জুলাই-২০২৪ এ স্বৈরাচারী সরকারের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র-শ্রমিকজনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় প্রায় ৮০০ জনকে। এই গণহত্যায় নিহত হয় শতাধিক শ্রমিক। এদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিক ১১ জন, আর এই ১১ জনের মধ্যে আমাদের ফেডারেশন (জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন)-এর‘ই ৮ জন।
বক্তব্যে উল্লেখ্য করা হয় “আন্দোলন এবং পরিবর্তনে যে ৮ শতাধিতক মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ শ্রমিকের সংখ্যা ২ শতাধিক। তাই আমরা এটাকে শুধুমাত্র ছাত্র গণঅভ্যুত্থান না বলে “ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান”হিসাবে উল্লেখ্য করতে চাই।”
তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসন আমলে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৫ লাখ কোটি টাকা। আর এই ১৫ বছরে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপেছে ১৮ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের বোঝা। এই টাকা ফেরত আনাসহ দেশের মানুষকে বিদেশি ঋণের বোঝা মুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আমিন আরও বলেন, ‘গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মজুরি বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বাদ দেওয়া, নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য, অন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলত ব্যবস্থা না নেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। কোথাও কোথাও কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমারা দেখেছি বহিরাগতরা শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।’
শ্রমিক ফেডারেশনে দাবি-
১. অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ৮ সদস্য সহ ১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক ও সকল শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. নিহত ফেডারেশনের ৮ সদস্যের পরিবার ও সকল শ্রমিক পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনঃবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ফেডারেশনের আহত ৫০ সদস্যসহ সকল আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গত মজুরী আন্দোলনে ২০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের নামে দায়েরকৃত ৪৩ টি সহ শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. প্রত্যেক কারখানায় ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
৬. যে সকল কারখানার শ্রমিকেরা ইতিমধ্যে মিডলেভেল ম্যানেজমেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তদন্ত
৭. সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৮. বে-আইনীভাবে শ্রমিকদের ব্লাক লিষ্ট (কালো তালিকা) করা বন্ধ করতে হবে। ইতিপূর্বে ব্লাক লিষ্টকৃত তালিকা বাতিল করতে হবে।
৯. গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
১০.শ্রমিক সংগঠনগুলোকে স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে হবে।
১১.কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।
১২.ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং পরিচালনায় সকল বাধা দূর করতে হবে।
১৩. গার্মেন্টস শিল্পের ৪২ লাখ শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১৪. কোন কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে শ্রমিক প্রতিনিধিদেরসহ দ্রুত সামাধান করতে হবে।
১৫. দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পিত্তি করতে হবে।
১৬. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম
বিধিমালা‘কে সংস্কার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিথি ছিলেন সলিডারিটি সেন্টার, বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর এ্যাডভোকেট এ. কে. এম. নাসিম, আইবিসি (ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল) সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ বাদল, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইন।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মিসেস আলেয়া বেগম, সহ-সভাপতি মিসেস জেসমিন আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন, নারী বিষয়ক সম্পাদক মিসেস সুইটি সুলতানা, দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেত্রী মিস ক্যামেলিয়া হাসান, সুরাইয়া জেসমিন রুমা, মিসেস মনিরা মুন্নি প্রমূখ।