ড্রাসিনা কাষ্ঠল কাণ্ডের গুল্মজাতীয় গাছ। আড়াই বা তিন মিটার উঁচু হতে পারে। কাণ্ড সরল বা শাখা বিভক্তও হতে পারে। পাতা অবৃন্তক।
নিচের দিকে চওড়া আবরণ থাকে। প্রচুর শাখান্বিত। ফুল সাদা বা ফ্যাকাসে হলুদ এবং তীক্ষ্ণ। বীজ গোলাকার, বাইরের আবরণ পুরু।
ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে স্থান পছন্দ। শাখাকলম ও বীজ থেকে বংশবৃদ্ধি। প্রাকৃতিকভাবেই গাছটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। একটি চা-বাগানের সংরক্ষিত টিলায় না গেলে জানতেই পারতাম না ড্রাসিনা আমাদের বনবাদাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে।
নগরের একচিলতে বাগান থেকে বারান্দা বা ছাদবাগান—সর্বত্র সযত্নে লালিত এই উদ্ভিদটি সম্ভবত নামের কারণেই কখনো দেশি মনে হয়নি।
একটি দেশি উদ্ভিদ কিভাবে বিদেশি নামে পরিচিত হয়ে উঠল সেটাও রীতিমতো বিস্ময়কর! গত কয়েক দশকে ড্রাসিনার আরো বেশ কিছু রকমফের আমাদের দেশে এসেছে। পরিচর্যা ও খাবার ছাড়াই গাছগুলো অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। অনেক বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেও ড্রাসিনা দিব্যি টিকে থাকতে পারে। এ কারণেই গাছটি বেশ জনপ্রিয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশে কিভাবে ড্রাসিনা খুঁজে পেলাম, সে কথাই বলব এখন। বছর কয়েক আগের কথা, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া স্টেশন থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শাবাজপুর চা-বাগানে পৌঁছে গেলাম। রাতে ঘুমানোর আগেই পরবর্তী দিনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হলো। পরিকল্পনামতো পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়ি। চা-বাগানের দুটি টিলা জরিপ করে উদ্ভিদগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা আমাদের মূল কাজ। এই টিলা দুটি মোটামুটি সংরক্ষিত। বাগান কর্তৃপক্ষ জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য এখানে চাষবাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। সাকল্যে আমাদের ছয়জনের দলটি এগিয়ে চলল টিলার দিকে।
তিন একর আয়তনের এই টিলা বিচিত্র গাছপালা, লতাগুল্ম আর তৃণরাজিতে পরিপূর্ণ। টিলার এক প্রান্ত থেকে আমাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হলো। পথ তৈরি করার জন্য বাগানের একজন সুদক্ষ কর্মীও সঙ্গী হলেন। তিনি গাছপালা ভালোই চেনেন। গত ২০ বছরে কত বন-জঙ্গল ঘুরেছি, কিন্তু অল্প পরিসরে এত উদ্ভিদবৈচিত্র্য খুব কমই দেখেছি। এখানকার প্রতিটি গাছই বুনো। এ কারণে সমতলের সঙ্গে গড়নের দিক থেকে কিছুটা ভিন্নতাও আছে। টিলার এক প্রান্ত থেকে আমরা নমুনা সংগ্রহ, ছবি তোলা ও পরিসংখ্যান তৈরির কাজ শুরু করি। সেখানে এমন কিছু উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পাই, যা রীতিমতো আশাবাদী করে তোলে। টিলার শেষ প্রান্তে গিয়ে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছি। আমার চোখের সামনে দু-দুটি ড্রাসিনাগাছ! প্রথমে ভেবেছি, গাছগুলো কেউ লাগিয়েছে। সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করি, তাঁরা জানান এখানকার প্রতিটি গাছই প্রাকৃতিক। এত দিন ভেবেছি, ড্রাসিনা বিদেশি গাছ। এখন দেখছি, আমাদের বনেও জন্মে। কী আনন্দের কথা! তবে দেশি এই গাছটির বাংলা কোনো নামও নেই। ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ অরণ্যতরুসন্ধানী জে ডি হুকার আমাদের দেশে প্রথম এই গাছটি নথিভুক্ত করেন। তিনি দ্য হিমালয়ান জার্নালে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের অভিযান সম্পর্কে উল্লেখ করেন, ‘টিলার পুব পাশ অধিক আর্দ্র, বন ঘনতর, জন্মেছে দু’জাতের বুনো জায়ফল, ট্রি-ফার্ন ও অন্যান্য ফার্ন, কয়েক জাতের ওক, ড্রাসিনা ও ডুমুর।’ (দ্বিজেন শর্মা অনূদিত হিমালয়ের ‘উদ্ভিদরাজ্যে ড্যালটন হুকার’)
ড্রাসিনা (Dracaena angustifolia) কাষ্ঠল কাণ্ডের গুল্মজাতীয় গাছ। আড়াই বা তিন মিটার উঁচু হতে পারে। কাণ্ড সরল বা শাখা বিভক্তও হতে পারে। পাতা অবৃন্তক। নিচের দিকে চওড়া আবরণ থাকে। পুষ্পবিন্যাস যৌগিক মঞ্জরিতে, ১০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রচুর শাখান্বিত। ফুল সাদা বা ফ্যাকাসে হলুদ এবং তীক্ষ্ণ। পুষ্পপুট দুই থেকে আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা, খণ্ড রৈখিক, ছড়ানো এবং বাঁকা। পুংকেশর ছয়টি, পরাগধানী দুই থেকে তিন মিলিমিটার লম্বা। গর্ভপত্র তিনটি, গর্ভদণ্ড গর্ভাশয়ের সমান। বীজ গোলাকার, বাইরের আবরণ পুরু। ফুল ও ফলের মৌসুম মার্চ থেকে আগস্ট। ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে স্থান পছন্দ। শাখাকলম ও বীজ থেকে বংশবৃদ্ধি। প্রাকৃতিকভাবেই গাছটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এসএটি/আরএইচ