সমসাময়িক রাজনীতি ও আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেলে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই মুহূর্তে কি প্রত্যাশা করছেন, এসব বিষয়ে নিজের অভিমত জানিয়েছেন বিএনপির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং পেশাজীবী সংগঠন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাউথ এশিয়ান টাইমস এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বলা হচ্ছে এ সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে? প্রশ্ন হলো- জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ছাড়া পরিপূর্ণ রাষ্ট্র সংস্কার আদৌ কি সম্ভব?
শামীমুর: ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। প্রহসন, নীল নকশার নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে গণতন্ত্রকে হত্যা করে তাদের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। এখন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। আমরা এ সরকারকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে রাষ্ট্রের মূল কাঠামো অর্থাৎ রাষ্ট্রের সংস্কার করছে তারা। শেখ হাসিনা সরকার কাটাছেড়া করে সংবিধান ধ্বংস করেছে। ফলে এই সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোনো কিছু পরিচালনা করা যাবে না। বরং আমাদের নতুন করে সংবিধান রচনা করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের মানুষের আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা; রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জনগণের সত্যিকার অর্থে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে যারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে; তারাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবে এমন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। কিন্তু তাদের দোসররা দায়িত্বে বহাল আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে সপদে বহাল রেখে কতটুকু রাষ্ট্র সংস্কার করা সম্ভব হবে?
শামীমুর: আমরা দেখতে পাচ্ছি খুনি শেখ হাসিনার পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিচার-বিভাগ, প্রশাসন (পুলিশ), সিভিল প্রশাসন, বিভিন্ন সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এখনও শেখ হাসিনার দোসররা বসে আছে। যারা রাষ্ট্রের শত্রু, জনগণের শত্রু ও দলকানা আওয়ামী লীগার। তারাই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। অথচ চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা অতিবজরুরি। কিন্তু দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দেশের মানুষ দেখছে; অনেক বিতর্কিত লোক পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানেও বহাল তবিয়তে আছে। আবার তাদেরকে পদায়নও করা হচ্ছে। যা দু:খজনক, আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। এমনকি যারা শহীদ হয়েছে তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হচ্ছে। আমি আশা করব; অন্তর্বর্তী সরকার চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে যারা অন্যায় করেছে, অপরাধ করেছে, হাসিনার দোসর হিসেবে চিহিৃত, যারা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বহাল আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল থেকে বলা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা যৌক্তিক সময় দেয়া উচিত? সেই যৌক্তিক সময় কতদিন হতে পারে বলে মনে করছেন?
শামীমুর: এই বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। মূলত সবাই মিলে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে এই যৌক্তিক সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে মানুষের প্রত্যাশা ও মূল সঙ্কট হচ্ছে গণতন্ত্রের সঙ্কট। দীর্ঘ ১৭/১৮ বছর যাবৎ দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য যা যা প্রয়োজন আমার দৃঢ় বিশ্বাস; সেটা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রতীয়মান হয়েছে। মানুষের অধিকার গুলোকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করছে। যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্বাচিত সংসদে ফিরে আসতে পারি।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে মূলত কোন কোন বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন?
শামীমুর: মূলত সংস্কার হলো; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৩১ দফা বিশিষ্ট রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। ইতিমধ্যে ওই প্রস্তাবনাগুলো দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বৃদ্ধিজীবীমহল, দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, বিশেষ করে সবার কল্যাণে একটি কল্যাণময় রাষ্ট্র গড়তে সংসদীয় গণতন্ত্র, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে ৩১ দফায় তা যুগোপযোগী। যাকে রাষ্ট্র সংস্কারের মূল হিসেবে চিহিৃত করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র উপহার দিতে পারব। যেখানে মানুষের ন্যায় বিচার, সাম্য ও শোষনমুক্ত-দুর্নীতিমুক্ত সরকার গঠন করতে পারব। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান সংস্কার বেশি প্রাধান্য পেতে পারে।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: কতদিনের মধ্যে বাংলাদেশে একটি কার্যকর নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন?
শামীমুর: সেটা আলাপ-আলোচনার বিষয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল আলোচনা করে ঠিক করা হবে। প্রত্যাশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। সেক্ষেত্রে যারাই নির্বাচিত হবে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকে দেশে ফেরাতে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?
শামীমুর: শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সে (শেখ হাসিনা) ইতিহাসের জঘন্যতম খুনি, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। গত ১৭/১৮ বছর রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে র্যাব, ডিজিএফআইয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং পুলিশের কিছু কর্মকর্তাকে নগ্নভাবে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম, হত্যা ও খুন করেছে। সবশেষ ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও ছাত্রদের ব্লকরেট দিয়ে ধরে এনে গুলি করেছে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। সে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম খুনি ও তার দোসর যারা এই সব খুনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সহায়তা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে, বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; এটাই দেশের জনগণের প্রত্যাশা।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে দখলদারের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসছে; যদিও দলটির শীর্ষ নেতাও নির্দেশনা দিচ্ছেন? যদিও নেয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টাও বলেছেন, চাঁদাবাজি কমেনি, শুধুমাত্র শূন্যস্থান পূরণ হয়েছে? এই বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
শামীমুর: বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ঘটতেই পারে। বিএনপি বড় একটি দল; লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী রয়েছে। যারা গত ১৮ বছর যাবৎ নির্যাতিত, গুম-খুন, মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থেকেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে। টুকটাক কিছু থাকবেই; তারপরও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশনা দিয়েছেন কেউ আইন হাতে তুলে নিবেন না। কারও ওপর জুলুম করবেন না, অন্যায় আচরণ করবেন না। কারও অধিকার হরণ করবেন না। উনি (তারেক রহমান) নিয়ন্ত্রণ করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও যারা টুকটাক করেছে তাদেরকে চিহিৃত করে ইতিমধ্যে শত শত নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের বলেছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেলে ৫ লাখ লোক মারা যাবে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ভয়ে লক্ষ লক্ষ লোক দেশ ছেড়ে পালাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনার পতন হয়েছে কোন লোক মারা যায়নি। এটাই আমাদের (বিএনপির) সফলতা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় বিএনপির কোন নেতাকর্মী আইন হাতে তুলে নেয়নি; কাউকে মারেনি। এতো বড় গণআন্দোলনের বিস্ফোরণে আওয়ামী লীগের বিদায় হয়েছে কিন্তু দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রয়েছে। চাঁদাবাজি কে বা কারা করছে সেটা দেখবে রাষ্ট্রশক্তি অর্থ্যাৎ যারা রাষ্ট্রপরিচালনা (অন্তর্বর্তী সরকার) করছে, আমরা তো চাঁদাবাজদের ধরতে সহযোগিতা করব। তবে আমাদের যদি কোনো লোক চাঁদাবাজি করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনতে গ্রেপ্তার করা হবে। বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের বিএনপি কখনো প্রশয় দেয়নি; সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের ঠিকানা বিএনপিতে নেই। বরং কঠোর নির্দেশানা যারাই চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: সম্প্রতি কৃষিবিদ ইনসটিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) কে কেন্দ্র করে দখলদারিত্বের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে আপনার বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
শামীমুর: এটি অবশ্যই ষড়যন্ত্রের অংশ। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ; পেশাজীবী কৃষিবিদদের একটি প্রতিষ্ঠান। দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষিবিদ এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য। আওয়ামী লীগের ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে গত ১৮ বছর যাবৎ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কোন নির্বাচন হয়নি। আমাদের কোন প্যানেল দিতে দেয়নি তারা। বিনা নির্বাচনে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানকে দখল করে রেখেছিল। সেখানে আমরা একটি প্রোগ্রামও করতে পারিনি। সাধারণ কৃষিবিদরা বরাবরই হয়েছে নির্যাতিত-নিপীড়িত, চাকুরিচ্যুত। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজারের বেশি কৃষিবিদকে প্রমোশন বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। যারা দেশের মানুষ ও দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দুজন নেতার (রাজ্জাক ও নাছিম) এর প্রভাব, দলীয়করণ, লুটপাট-দুর্নীতির কারণে, কৃষিবিদ ইনসটিটিউশন দখল করে রাখার কারণে আজ এই প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেই অধিকার ফিরিয়ে আনতে কিছুদিন আগে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে। মূলত শস্যক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্বচিত্র একটি প্রকল্প তৈরি ছিল; যার মিডিয়া পার্টনার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪। যার মালিকানা রয়েছে এ কে আজাদ, যিনি আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়াও শেরপুরের একশ বিগা জমি নিয়ে সেখানে তিনশ কোটি টাকার প্রজক্টে লুটপাট করা হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজ্জাক ও নাছিমরা। আর লুটপাট দুর্নীতি করে কৃষি সেক্টর, ভিন্নমতের কৃষিবিদদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। অনেকেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, ১৮ বছর কোনো পদোন্নতি দেয়নি। একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল রাজ্জাক-নাছিম গং। আমরা শুধুমাত্র সাধারণ কৃষিবিদদের নিয়ে মিছিল করে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, সেটাকে রক্ষা করেছি। কৃষিবিদরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে এনেছে।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান?
শামীমুর: ৩১ দফার ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ একটি সুখী, কল্যাণমূলক, ন্যায়ভিত্তিক, শোষন, দুর্নীতি, ঘুষমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে মানুষের অধিকার থাকবে, গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে; এবং ন্যায় বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। যেখানে অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে পাট ও আখ সেক্টরে অবনতি হয়েছে; চিনি কলগুলোর অবস্থাও বেহালদশা। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসে তাহলে এই দুটো সেক্টরে আপনারা কতটুকু গুরুত্ব দেবেন?
শামীমুর: বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া হবে কৃষি সেক্টরে। অতীতে আমরা যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলাম, তখন এম কে আনোয়ার কৃষিমন্ত্রী ছিলেন। আমি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর তখন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। উনার সঙ্গে কাজ করেছি। তখন পরপর তিনবার বন্যা হয়েছিল; আওয়ামী লীগ বলেছিল ১০ লাখ লোক মারা যাবে। কিন্তু উনি (কৃষিমন্ত্রী) সাড়ে তিন লক্ষ কৃষককে বিনা পয়সায় সার, বীজ, কীটনাশক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দিয়েছেন। কৃষকরা কৃষি উৎপাদনে ফিরে এসেছিল। যা শুধুমাত্র দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সততার কারণে সম্ভব হয়েছিল। আজকে কৃষি সেক্টরের এই দুরবস্থার কারণ আওয়ামী লীগের দলীকরণ ও লুটপাট। এই জায়গাতে আমাদেরকে জিরো টলারেন্স বজায় রাখতে হবে। দুর্নীতি, লুটপাট করা যাবে না। আমাদের মাটি সোনার মাটি। পৃথিবীর কোথাও এতো শস্য উৎপাদন হয় না। আমি মনে করি, এখানে যদি সততা নিষ্টা স্থাপন করতে পারি; কৃষিবিদদের সেই যোগ্যতাও রয়েছে। যদিও আমাদের জমি কমে যাচ্ছে কিন্তু জনগণের চাহিদা বাড়ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই বেশি উৎপাদনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমি মনে করি দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে এই ধরণের জাতীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে মুখ থুবড়ে পড়বে। যা মানুষের কল্যাণে কোন কাজে আসবে না।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: প্রক্রিয়াজতকরণ সেক্টর যেখানে কৃষি সম্প্রসারণ ওতোপতোভাবে জড়িত। আদমজী জুটমিল বন্ধ, শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে? ক্ষমতায় আসলে জুটমিলগুলো চালু করতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা?
শামীমুর: পাট আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, বিশেষ করে দেশের দক্ষিনাঞ্চল খুলনায়। ১৪টির বেশি পাটকল সেখানে রয়েছে; যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে, কেউ কেউ জেলে গেছে, কিন্তু তাদের মজুরি বোর্ডে দেয়া হয়নি। সমস্ত পাট কল বন্ধ। এখানে রকিবুল ইসলাম বকুল রয়েছেন যিনি কাজ করছেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। আমরাও কাজ করছি। প্রত্যেকটি জুটমিল শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা বসেছি। যদি বিএনপি সরকারে আসে; এবং আমরা এই সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে দাবি করব- পাটকল খুলে দিয়ে শ্রমিকদের উৎপাদন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে এনে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেবে। আদমজীকে পুনরায় নতুন করে উৎপাদন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি পাটের সোনালী যুগ সেটা ফিরিয়ে আনতে অঙ্গীকার বদ্ধ।
সাউথ এশিয়ান টাইমস: শত ব্যস্ততার মধ্যে সাউথ এশিয়ান টাইমসকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
শামীমুর: আপনাকেও ধন্যবাদ। সত্য সংবাদ প্রকাশে এগিয়ে যাক সাউথ এশিয়ান টাইমস।