জীবন মানেই একটা গল্প, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেখানে থাকে অনেক গল্প। যেই গল্পের মাঝে থাকে সহযোগিতার কথা, অনুপ্রেরণার কথা, সফলতার কথা । অনেক অভিজ্ঞতার কথা। আবার কোনো কোনো গল্পে লুকিয়ে থাকে হতাশার কথা, নির্যাতনের কথা, বেদনার কথা, পাওয়া না পাওয়া ও অনেক সংগ্রামের কথা।
অনেকেই হয়তো তার জীবন খাতার টুকরো টুকরো গল্প গুলো মেলে ধরতে পারে না সম্ভব ও নয়। সবার জীবনে তো বলার মতো গল্প থাকে না...! কিংবা মন খুলে অন্যকে বলার মতো সামাজিক পরিবেশ হয়তো থাকে না। তেমনই একটা গল্পের মেয়ে ‘হেনা’।
শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা না দিতেই নতুন এক জীবনের মুখোমুখি হয় হেনা । বসন্তের দোলা, নতুন পাতার ঘ্রাণ আর কোকিলের কুহূতান এখনো তার হৃদয়ে দাগ কাটেনি। সবুজ পত্র পল্লবে সুশোভিত কলি হয়ে ফোটার আগেই রক্তাক্ত হয়ে ধূলয় লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু অবুঝ হেনা উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেও যেন দাঁড়াতেই পারছেনা। শুরু হয় নীরব এক যুদ্ধ। খুব বিনয়ী হবার কারনে এবং গতানুগতিক যোদ্ধা না হবার কারনেই সে মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে। তারপরেও সে এগিয়ে যায় জয়ের আশা নিয়েই। হেনা জানেনা ভাগ্য বিধাতা তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে...!
কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলোনা হেনার। তার শৈল্পিক মনে শুধু একটাই স্বপ্ন আর একটাই চাওয়া ছিল। চারপাশে লতাপাতায় জড়ানো সবুজ আল্পনা সামনে একটা সরু খাল কিংবা নদীর কোল ঘেঁষে ভালোবাসায় গড়া ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর যেখানে বসে সে চাঁদনী রাত দেখবে। সেই জোছনার আলোর বন্যায় হয়তো তার চাপা কষ্ট গুলো একটু হলেও ভেসে যেতো।
অনেকদিন চাঁদনী রাত দেখে না হেনা। একা একা ব্যালকনিতে বসে জোছনা বিলাস করবে। গুনগুন করে গান গাইছে জোছনার আলোতে বসে। হঠাত একটা ভাবনা এসে এলোমেলো করে দেয় হেনাকে। দখিণা বাতাসে এলো মেলো চুলের ফাঁকে তার অশ্রুসিক্ত ভেজা চোখটি চিক চিক করছে। শব্দহীন নীরব কান্নায় হৃদয় থেকে বৃষ্টির মতো রক্ত ঝরছে। হেনা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। ভাবনা গুলো থেকে নিস্তার পেতে চাচ্ছে। অস্পষ্ট স্বরে তার বিবেক বলে উঠলো। আমিতো সব দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছি এবং তা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্যই। একজন রক্তে মাংসে গড়া মাটির মানুষ হিসেবে কোন বিনিময় তো কখনোই চাইনি। বাড়ি গাড়ি অর্থকড়ি ও নয়। শুধু একটা চাঁদনী রাত চেয়েছি ...।
জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে হেনা। ঘুমহীন রজনীতে বসে জীবনের শূন্য পাতা গুলো সাজানোর ব্যারথ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের দৃষ্টি সীমা। প্রাণবন্ত চঞ্চল হেনার জীবনের কোলাহল যেন থেমে যাচ্ছে। ম্লান হয়ে যাচ্ছে তার হাসি।
নিয়তির উপর মানুষের হাত নেই, নেই নিয়তির ভালো মন্দ নির্ধারণ কারী মহান স্রষ্টার উপর। তাই সব কিছু মেনে নিয়ে বাবা মাকে সুখী রাখতে সুখের অভিনয় করে যাচ্ছে হেনা। মাঝে মাঝে বাবা মার উপর খুব রাগ হয় হেনার, অর্থহীন লাগে সব কিছু। ইচ্ছে হয় নিজেকে শেষ করে সবাইকে শাস্তি দিতে কিন্তু পারেনা।
কারণ সে বিশ্বাস করে এই পৃথিবীতে তাকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। তাকে সেই জীবনের অর্থ খুঁজে বের করতেই হবে। উঁচু নিচু পথ, প্রচণ্ড ঝড়ের তীব্রতা তারপরেও অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী হেনা ছুটে চলে, এ ছুটার যেন শেষ নেই....।
আরএইচ/এসএটি