গত ৮ আগস্ট রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই রাতে শপথ নেন আরও ১৫ জন উপদেষ্টা। সেদিন দুজন উপদেষ্টা অনুপস্থিত থাকলেও পরে তারা শপথ নেন। সেই রাতেই মন্ত্রণালয় বণ্টন হয়।
উপদেষ্টাদের মধ্যে সবার নজর কাড়েন দুজন। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। একজন নাহিদ ইসলাম, আরেকজন আসিফ মাহমুদ। নাহিদ বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা, আসিফ হলেন বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
এরআগে, গত ৫ আগস্ট কোটা সংস্কারের দাবি থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এরপর ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এদিন দুপুরের দিকে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান ভারতে। পরদিন ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকে পদত্যাগ করেন।
ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর উপউপচার্য ও ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রো-ভিসি (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
দেশের আরও পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা হলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ড. মুহাম্মদ মাছুদ। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য হলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এনটোমলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আব্দুল লতিফকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়ে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলামের সই করা আলাদা প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়।
আজ সেই সরকারের এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগে অর্থাৎ গত বুধবার ৯২ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৯৮ জন বিশ্বনেতা সমর্থন জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৫ আগস্ট এক মাস পূর্তি উপলক্ষে এক বার্তায় বলেছেন, সেই বেদনা ও দায় অন্তরে ধারণ করে সবারই ভাবতে হবে-এবারের শহিদের রক্তের ঋণ শোধ করাটা জাতীয় দায়িত্ব। জাতির পক্ষে এই দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিশেষভাবে বর্তায়।
এরপর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা একেবারে নতুন হলেও প্রথম দিন থেকে তার কোনো চিহ্ন চোখে-মুখে পড়েনি। বুকে দুরন্ত সাহস নিয়ে পথ চলতে গিয়ে যেন কিছুটা হোঁচট খাওয়ার মতো পরিস্থিতি সামলে এলেন সবাই। প্রধান উপদেষ্টা রংপুরের শহিদ আবু সাইদের কবর জিয়ারত করে অনেকটা নতুন করে শপথ নেন। দৃঢ়চেতা কণ্ঠে বলেন, শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।
প্রধান উপদেষ্টা তার সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিকে জানানোর জন্য এক ভাষণ দেন। যার মধ্য দিয়ে জাতি এক নতুন আলোর পথ খুঁজে পায়। তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দেন, যা নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য পাথেয়।
এক মাস সময়টা খুবই অল্প। এরপরেও তিনি ও তার উপদেষ্টারা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমেই ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি বাতিল করা হলো। সচিব থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পদে বসানো হলো ভিন্ন মাত্রার কর্মকর্তা। এরই মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গেল। প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুচিন্তিত আর পরিচ্ছন্ন।