- দুবাইয়ে ব্যবসা, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম
নিজের নাম বদলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আবাসিক অনুমোদন (পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল পারমিশন) নিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। দেশটির ফেডারেশ অথরিটি ফর আইডেন্টিটি অ্যান্ড সিটিজেনশিপ থেকে ইস্যু করা পরিচয়পত্রে তার নাম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আনসারী। তিন বছর মেয়াদী ওই কার্ডে স্পষ্টভাবেই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি রয়েছে। ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর কার্ডটি ইস্যু করা হয়। আগামী ১০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে।
শুধু তাই নয়, দুবাইয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগও রয়েছে মো. সাহাবুদ্দিনের। ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার তিনি। এর পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে বিনিয়োগ আছে রাষ্ট্রপতির। দেশটির আফিন ব্যাংকে নিজ নামে পরিচালিত হিসাবের মাধ্যমে তিনি ওই কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসের হাতে আসা ডকুমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ শারফুদ্দিন আনসারির নামে আমিরাত সরকারের ইস্যু করা আবাসিক পরিচয়পত্রে আরবি ও ইংরেজিতে কার্ডধারীর তথ্য রয়েছে। কার্ডটি যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের তা ছবিতেই স্পষ্ট। সেখানে তার জাতীয়তা ‘বাংলাদেশি’ উল্লেখ করা আছে।
অন্যদিকে দুবাইয়ের ওয়ারাদ জেনারেল ট্রেডিং এলএলসির পার্টনারশিপ সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্টে তার নাম মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ শারফুদ্দিন। তবে ওই কোম্পানিতে তার বিনিয়োগের পরিমান কিংবা অংশীদারিত্ব সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে মালয়েশিয়ার আফিন ব্যাংকের একটি ডিপোজিট স্লিপে দেখা যায়, ওই হিসাবধারী মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশি নাগরিক। ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি ওই হিসাবে দেড় লাখ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জমা করেন— বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমান ৪১ লাখ টাকার বেশি।
এর আগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রপতির বিদেশে বিনিয়োগ ও আবাসিক অনুমতি নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, আবার একইসঙ্গে তার রয়েছে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগ এবং দুবাইতে ব্যবসা ও সে দেশের রেসিডেন্সি। এ ছাড়াও তার তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টে বিনিয়োগ রয়েছে বলেও শোনা যায়।
জুলকারনাইন লিখেন, ‘প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রপতি চুপ্পু বিদেশে এসব বিনিয়োগের কোনো অনুমতি কি আদৌ গ্রহণ করেছেন? যদিও এসবই তিনি করেছেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে। তাহলে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতীত মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমে জনাব চুপ্পুর ১৫০,০০০ রিংগিত ও দুবাইর ব্যবসায় বিনিয়োগ কি বৈধ? এবং তিনি যদি আনুগত্য মেনে অর্থের বিনিময়ে তৃতীয় একটি দেশের পাসপোর্টও গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে কি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহাল থাকা তার পক্ষে সম্ভব হবে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে কখনোই এত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল শপথ নেন। তিনি পেশায় একজন আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন কছেন। তার আগে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। তাকে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।