সারাদেশে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশ-বিদেশে থাকা নাগরিক সংগঠন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ (সিআই)। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির পাবলিক রিলেশন মো. রুহেল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের পক্ষে বিবৃতিতে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক তাইয়িব আহমেদ।
এতে বলা হয়, 'গত ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও খাগড়াছড়িতে দেশের তিনটি ভিন্ন ঘটনায় তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার তীব্র প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানাচ্ছে দেশ-বিদেশে থাকা একাডেমিকস ও পেশাজীবীদের নাগরিক সংগঠন সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ। বিভিন্ন পত্রিকা ও স্যোশাল মিডিয়ায় প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি যে এই গণপিটুনির মত পৈশাচিক বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড চলার সময় এই ঘটনা প্রতিরোধ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানে হল ও থানা প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। এটি দুঃখজনকভাবে দেশে বিগত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা চলমান থাকার নিদর্শন বহন করে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এ ছাড়াও গত ১৩ই সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের উপর্যুপরী হামলায় সেচ্ছাসেবক দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা নিহত হয়েছেন। আমরা প্রতিটি ঘটনার তদন্ত ও দ্রুত বিচারের মাধ্যমে খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।'
সিআই মনে করে, 'দেশজুড়ে চলা এই মবলিঞ্চিং ও মবভায়োলেন্সের দায় প্রশাসন কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। এই মবভায়োলেন্সকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় নিরস্ত করতে প্রশাসনকে আরো কঠোর ও দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। এ ছাড়া গত পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় চলা বিচারহীনতার সংস্কৃতি দুর করতে ও জনমানুষের মনে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচার বিভাগে জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার আহবান জানাচ্ছে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মন্দির ও মাজারে হামলাসহ গণপিটুনির মত মবভায়োলেন্সের ঘটনাগুলোর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি একজন অপরাধীরও আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।'
বিবৃতিতে সংগঠনটি আরও বলে, 'আমরা পত্র-পত্রিকা ও স্যোশাল মিডিয়া মারফত যা জেনেছি তার ফলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টার অধিকাংশ ঘটনার পিছনে অভ্যুত্থানে পরাজিত ফ্যাসিবাদী দল ও গোষ্ঠীর ইন্ধন ও প্রচেষ্টা বিদ্যমান। অতিস্বত্তর সারাদেশে গত ১৫ বছরে হত্যা, লুটপাট, চাঁদাবাজী ও গুমসহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের নানা পর্যায়ের অসহযোগিতাও অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমরা জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভ্যুত্থানের চেতনার সাথে একতাবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়াও সিআই মনে করে রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরী রাজনৈতিক দল ও জনগণের উচিত সতর্ক থেকে যেকোন উষ্কানিমূলক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রাষ্ট্রকে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা যেখান থেকে সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে পারে।'