সাংবাদিক নির্যাতন হয়; খুন হয় আর এদেশে তার বিচার হয় না। এটা কিসের আলামত? জাতিয়পার্টি, বিএনপি, আওয়ামিলীগ এমনকি ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও সাংবাদিক খুন, গুম, নির্যাতনের শি^কার হয়েছে। ক’টার বিচার হয়েছে? সাগর-রুনী হত্যার কুল কিনারাই পেলনা সরকার।
এ অবস্থায় সাংবাদিকরা যে এদেশে অনিরাপদ তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। গতকাল (১৫ জুন) জামালপুরের বকশীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম সর্বশেষ খুন হয়েছেন। এ হত্যার হত্যার ঘটনায় ১৬ জুন সকাল পর্যন্ত ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আরো আরো আটক হবে হয়তো! বিচার কি হবে? বিচার আইন আদালত নিয়ে কথা বলতে চাই না। আদালত অবমাননার দ্বায়ে মামলা হতে পারে, আতেঘাঁ লাগলে আমার উপরও হামলা হতে পারে। তার পরও দু’চারটা কথা বলতে হবে। সহযাত্রীদের এভাবে চলে যাওয়া, এভাবে রক্তপাত দিলেতো চোট লাগে বটেই! এভাবে আর চলে না।
সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের খুন করে। রাজনীতিবিদ,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের নামে মামলা ঠুঁকে দেয়। আবার কথায় কথায় রাজপথে সাংবাদিক পেটায়। এদেশে বরাবরই নানাভাবে হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সন্ত্রাসী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এমনকি রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের ওপর ঝাল মেটায়। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কাউকে ছাড় না দিয়ে একজন সাংবাদিককে ঘুষ-দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। আর তাতেই ক্ষেপে যান সংশ্লিষ্টরা। কখনো জীবন কেড়ে নেওয়া, কখনো শরীরে হামলা, আবার প্রায়শই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে সাংবাদিকদের। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, সাংবাদিক খুন হচ্ছে।
গত ১৪ জুন রাত ১০টার দিকে পেশাগত কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় অস্ত্রধারী ১০ থেকে ১২ জন দুর্বৃত্ত সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা চালায়। ১৫ জুন দুপুর আড়াইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম বাংলানিউজ২৪.কমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি। পাশাপাশি তিনি জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার দৈনিক মানবজমিন ও ৭১ টিভির প্রতিনিধি। সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় ফুসে উঠেছে গোটা সাংবাদিক সমাজ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ডিআরইউ, বিএফইউজে, ডিইউজে, কলামিস্ট ফোরাম অপ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন এর তীব্র প্রতিবাজ জানিয়েছে।
কষ্টের কথা হলে- সন্ত্রাসী হামলায় একের পর এক সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আইনি জটিলতায় বিচারিক কার্যক্রমে ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’। সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সন্ত্রাসীদের ঔদ্ধত্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
দেশে গণমাধ্যমের যে উজ্জ্বল ভূমিকা, তার সঙ্গে সারাদেশের হাজার হাজার সাংবাদিকের ঘাম-শ্রম ও জীবনের ঝুঁকি জড়িত। কিন্তু সাংবাদিকদের নিয়ে রাষ্ট্র ভাবছে কম! বর্তমানে সাংবাদিক নির্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। অনেক সময় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায়ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। জেলা উপজেলা পর্যায়ে সেটা বেশি। দেশ জুড়ে প্রেসক্লাব দখল, দলীয়করণ এবং কুক্ষিগত করার ঘটনাও রয়েছে অনেক। সাংবাদিকদের ইচ্ছা মাফিক নিউজ করতে বাধ্য করা। কথা না শুনলে নানাভাবে হয়রানি করা। অথচ সরকার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটি খুবই উদ্বেগজনক। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশে এসব 'সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন' বন্ধ করা খুবই জরুরি।
পরিসংখ্যানটি আঁতকে ওঠার মতো। গত দেড় যুগে ৫১ জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের এই দেশটিতে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা থেকে শুরু করে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের একটি ঘটনার সঠিক বিচার হয়নি। খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা নিজেরাই খবর হচ্ছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। বাকি ২০২৩ সালের মধ্য জুন পর্যন্ত গত সারে ৪ বছরে আরও অন্তত এক ডর্জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে, অন্যদিকে শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একটা বিষয় বেশ লক্ষণীয় যে, সাংবাদিকদের ওপর কেন একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে- কোনো সরকারের হাতেই প্রণীত হয়নি একটি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন। এমনকি দেশে অব্যাহত সাংবাদিক খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনো খুনের বিচার প্রক্রিয়াই সুষ্ঠুভাবে এগোয়নি। প্রকাশ্যেই সিরাজগঞ্জে মেয়রের গুলিতে সাংবাদিক হাকিম খুন হন। যশোরে দ্বায়িত্বপালন কালে নিজ অফিসে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যাসহ বেশ কজন সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন মামলার ক'টির বিচার হয়েছে এ পর্যন্ত? দেশে সাংবাদিক হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি একটিরও। একইভাবে দিনের পর দিন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সাংবাদিকতা পেশা ক্রমাগতই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথাগত দুঃখ প্রকাশ ও হামলাকারীদের শাস্তির আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্বের যেসব দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না, সে দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সাংবাদিক খুন হয় আর তার বিচার হবে না তা কী করে হয়? রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারকে এসব হত্যাকান্ডের বিচারে অবশ্যই আন্তরিক ও কঠোর হতে হবে।
যুগেযুগে সাংবাদপত্র আর সাংবাদিকদের কন্ঠরোধেরও ইতিহাস আছে। আয়নায় যখন আমরা নিজেদের মুখ দেখি, তখন ভেসে ওঠে ভিন্ন ছবি! সে ছবি উজ্জ্বল নয়, নয় দৃষ্টিনন্দন। এ ছবি অনেকটা মসিলিপ্ত, অসম্পূর্ণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে কলুষিত, কুৎসিত। আমরা সব সময়ই গণতন্ত্রের কথায় উচ্চকণ্ঠ হই, স্বাধীনতার প্রশ্নে হ্যাঁ বলি, কিন্তু সংবাদপত্র কিংবা বাস্তবে সম্প্রচারমাধ্যমকে খুব বেশি মর্যাদা দিই না কখনোই। আমরা গণঅধিকারের দাবিতে সোচ্চার হই, কিন্তু গণঅধিকারের রক্ষাকবচ যে গণমাধ্যম তথা সংবাদমাধ্যম, তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কুণ্ঠাবোধ করি। সাংবাদিকদের যথার্থ মর্যাদা দেয়ার পাঠ এখনো আমরা গ্রহণ করিনি, এমনকি করার উচ্ছাও নেই বোধ করি। অবাধ তথ্যপ্রবাহের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হই বরাবরই। নিজেদের সঙ্কীর্ণতা ঢেকে রাখতে ভালোবাসি বলেই যারা সত্য প্রকাশে উদ্যোগী, তাদের নাস্তানাবুদ করতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করি না, প্রকাশ্যে বদমাইশ, লম্পট বলে গালি দিতে ইতস্তত হই না। মারধর জেলজুলুম দিয়ে সায়েস্তা করতে, গুম করতে, খুন করতে উদ্দত হই বরাবর। আমরা সত্যানুসন্ধানেরত সাংবাদিকদের ভালোবাসতে নাই বা পারলাম, কিন্তু তাদের জীবন ক্ষতবিক্ষত করার ক্ষেত্রে আমাদের জুড়ি নেই। সব সরকারের সময় তা হয়েছে হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার। না হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বলে আর কিছুই যে থাকবে না।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ হয়েছে। সেখানেও সাংবাদিকদেরকেই বেশি জড়ানো হচ্ছে। অবশ্য আজকাল সরকারের দেওয়া অবাধস্বাধীনতার জেরে যেভাবে ডিজিটাল অপপ্রচারকারীর সংখ্যা বাড়ছে তা ভাবনারই বিষয়। মূহুর্তেই উৎভটসব অপপ্রচার চলে নানা ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে সরকার বিব্রত। কতক পত্রপত্রিকাও এমন প্রচারে সুখ পায় বটে! তাতে সরকার এমনি বিশেষ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। মিথ্যা প্রচার-প্রচারনা আমাদেরও উৎকন্ঠায় ফেলে। তাই ডিজিটাল অপপ্রচারকারীদের কন্ঠরোধের প্রয়োজন আছে বৈকি!। ডিজিটাল অপপ্রচারকারীদের কন্ঠরোধ করতে গিয়ে যেন সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা না হয় সেটাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়। সাংবাদিক সমাজে এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সরকারকে দুর করতেই হবে। উৎকন্ঠারও কিন্তু কারন আছে। এর আগে ৫৭ ধারা নিয়ে দেশ জুড়ে সাংবাদিকরা সোচ্চার হয়ে ছিলেন। তখন বলা হয়েছিলো কোন সাংবাদিক এ ধরায় হয়রানীর শিকার হবেন না। কিন্তু আমরা কি দেখেছি? এ ধারায় সাংবাদিকগণই সবচেয়ে বেশি হয়রানীর শিকার হয়েছেন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে কোনো সময়ই সংবাদপত্রের অবাধ স্বাধীনতা ছিল না। কখনো সংবাদপত্রের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সেন্সরশিপ, প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন কালাকানুন। গণমাধ্যমের কার্যালয়ে পুলিশের মারমুখী অনুপ্রবেশ, কর্মরত সাংবাদিককে চোর-ডাকাতের মতো আটক করার ঘটনা ঘটেছে অনেক। এবার নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। সাংবাদিকগন এনিয়ে এখন বেশ সোচ্চার। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং সংবাদপত্র মালিক সংগঠনও এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন কিংবা বাতিল না হলে সংবাদিক এবং সংবাদপত্র অনৈতিক চাপের মুখে পড়বেন বৈকি!
নীতিমালার নামে মানুষের বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ যেমন নিন্দনীয়, তেমনি স্বাধীনতার নামে সম্প্রচারমাধ্যম এবং পত্রপত্রিকাগুলোর দ্বারা এর অপব্যবহার করে সমাজে টেনশন ও গোলযোগ সৃষ্টিও কাম্য নয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রহরণেরই নামান্তর। তা করা মোটেও সুখকর নয়। বিশ্বে কোনো দেশে কোনো সময় তা সুফল বয়ে আনেনি। সরকারের কোন আইন বা নীতিমালার বিরুদ্ধে আমি নাই। যে কোনো কিছুর জন্য নীতিমালা থাকা ভালো। সমস্যাটা হলো অপব্যবহারের। আর আমাদের দেশে এ সমস্যাটা প্রকট। আমরা সময় সুযোগ পেলেই যে কোনো কিছুর অপব্যবহার করি। কোন নীতিমালা বাকস্বাধীনতার সৌন্দর্য রক্ষায় প্রণীত হবে, সে নীতিমালা যদি ‘নিয়ন্ত্রণের’ রূপ নিয়ে সেই আকাঙ্খিত স্বাধীনতাকেই টুঁটি চেপে ধরে, তা ঠেকাবে কে?
প্রশ্ন হলো, সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদিত নীতিমালাটি যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে প্রণীত হয়েছে কি? সরকার সংশ্লিষ্টদের ভাষায় নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকগণ হয়রানি হবেন না এমন বিবৃতি এসেছে। যদি তাই হতো, তাহলে ভালো ছিলো। এখনতো দেখছি কোথাও কোথাও এর অপব্যবহার হচ্ছে। এটা সরকার এবং সাংবাদিকদের সাথে সংঘাত তৈরি করতে পারে। অধিকাংশ সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকগণ সরকারের কর্মকান্ডকে সামনে তুলে ধরে প্রকারন্তে সরকারেরই কাজ করছে। তাহলে সাংবাদিকরা এভাবে হয়রানীর শিকার হবেন কেন? ডিজিটাল নিরাপিত্তা আইন নিয়ে কোন বিতর্কে যেতে চাইনা। তবে এ আইনের অপপ্রয়োগ গণমাধ্যমের সুন্দর পথচলা রুদ্ধ করবে বৈকি! এ মূহুর্তে সংবাদপত্র তথা সাংবাদিকটের চটানো কতটা সঠিক হবে তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। ভুল পথে হাঁটা সরকারের জন্য বিপজ্জনক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, বাড়ছে এর অপপ্রয়োগও। তাই সাইবার অপরাধ বাড়ছে। নিরাপত্তা আইনটা দরকার আছে। এদেশের মানুস অপপ্রচারে বেশ ওস্তাদ। কথায় কথায় সামাকিজ যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করে। কেউকেউ সরকারের উন্নয়নের কথা একদম বাদ দিয়ে নানা বিষয় নিয়ে মনগড়া কথা লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সরকার বলছে, এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বা দমনের জন্য এ আইন করা হয়েছে; সংবাদপত্র বা বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের জন্য নয়। মত প্রকাশে বাধা যেন না থাকে সেটা নিশ্চিত করা জরুরী। তবে আমরা এ াাইনের অপব্যবহার হতে দেখাছি। সাংবাদিকদেরই এ আইনে ফাঁসানো হচ্ছে বেশি। সাংবাদিক প্রতিনিধি, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী, গবেষক ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে আইনটিতে যথাযথ পরিবর্তন আনা জরুরী। যেসব বিধান অপপ্রয়োগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ থেকে সরকার সেই সব বিধান সত্তর অপসারণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। তা না হলে সাংবাদিক নিরাপত্বা সেসঙ্গে মামলায় হয়রানির ঘটনা বাড়বে।
গভীর রাত পর্যন্ত ঘুমহীন কাজ করতে হয় অনেক সংবাদকর্মীর। অনেকটা নিশাচরের ভূমিকা তাদের। সাংবাদিকদের পারিবারিক জীবন বলতে কিছু নেই বললেই চলে। কিন্তু সাংবাদিকদের মূল্যায়ন সমাজে নেই। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতো রয়েছেই। সমাজের অনেক সাংবাদিক ত্যাগী, নির্লোভী ও সৎ। তারা মানবকল্যাণে, সমাজকল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন। এই দিকটিও সরকারকে আমলে নিতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যা বন্ধ করা না গেলে সৎ, মেধাবী, যোগ্য, তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা এখন যে সংবাদপত্রে ঢুকছেন, তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এমনিতেই সাংবাদিকদের পেশাগত নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা নেই, তার ওপর যদি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে তাদের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যায় কিংবা তারা হামলা এবং হত্যার শিকার হন তাহলে কীভাবে সাংবাদিকতা পেশা বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হবে?
আমরা মনে করি, সাংবাদিকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বাংলাদেশে আজও পর্যন্ত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, কোনো সাংবাদিক হত্যাকান্ডেরই বিচার হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পথে ঘাটে যদি পুলিশ সাংবাদিকদের পেটায়, সাংবাদিক যদি জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসীর রোষানলে পড়ে, খুন হয়, গুম হয় তাহলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বলে আর কিছু থাকে না। সরকারকে এখনই ভাবতে হবে। আমলে নিতে হবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি।
লেখক : সাধারন সম্পাদক- কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ।