জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই করতে হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মালিকানা জনগনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে নির্বাচন কেন্দ্রীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে তাতে কোনো লাভ হবে না। এটা আমাদেরকে করতে হবে।সংবিধান সংস্কার ও শাসনব্যবস্থা মেরামত করতে হবে। যারা হত্যা করেছে, তাদের ক্ষমা করা যাবে না। তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে।”
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টারআস ইউনিটি কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ‘দ্বি-কক্ষ পার্লামেন্ট : উচ্চ কক্ষের গঠন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
মূল প্রবন্ধে জাতীয় সংসদ প্রশ্নে জেএসডির প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান এক কক্ষের জাতীয় সংসদ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন যার মেয়াদ হবে ৪ বছর। সংসদের নিম্ন কক্ষ হবে ৩‘শ আসন বিশিষ্ট এবং উচ্চ কক্ষ ২‘শ আসনের।
সংসদের নিম্ন কক্ষে দলীয় প্রতিনিধিরা এবং উচ্চ কক্ষে শ্রেনী-পেশা-কর্মজীবীর প্রতিনিধিরা থাকবেন। উচ্চ কক্ষ থেকেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে।
প্রস্তবনায় এক ব্যক্তির দুই ভোট, একটি এলাকাভিত্তিক সাধারণ ভোট এবং অপরটি শ্রম-কর্ম-পেশাভিত্তিক ভোট থাকবে। নির্বাচনে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেভাবেই হোক এখন যারা অন্তবর্তী সরকার তারা এই গাড়িটা চালাচ্ছেন, ড্রাইভ করছেন তাদের হাতে স্ট্যায়ারিং। শেষ সিদ্ধান্তটা তারাই নিতে হবে এটা ভাবতে হবে আপনাকে। আমি-আপনি যদি আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের মতো করে নিতে চাই এবং হতেই পারে এই সরকারের সঙ্গে আপনার একটা লড়াই হতে হবে। সেই লড়াই চান নাকি ঐক্যমত্য চান। ঐক্যমত্য যদি চান তাহলে আমি বলব তাহলে আমাদের মধ্যে এই ডিসকোর্স মানে নিজেদের মধ্যে জ্ঞানের ধারণা আদান-প্রদান এবং সেটা যতদূর সম্ভব এক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য যতদূর সম্ভব নিরন্তর সংগ্রাম করতে হবে আমরা যতদূর যেতে পারব ততদূর পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারব। বাকি জায়গায় যদি জোর করে যেতে চাই সেই বিতর্ক চলতে থাকবে এবং দেশের শান্তি স্থিতিশীলতা পুরোপুরি নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো বিষয় আছে সংবিধান সংশোধন নিয়ে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটু আগে বক্তৃতা করলেন, নিশ্চিয় আপনারা শুনেছেন। উনার মনে করে এবং সম্ভবত সেটা হওয়া উচিত; এই সরকারের একটা টার্মস অব রেফারেন্স থাকা উচিত…. মানে তারা এতো দূর যেতে পারবে, এতদূর পারবে না। আমি যদি সাধারণভাবে বলি তাহলে বলব, আমাদের মূল সংগ্রাম কিসের? আমাদের ভোট দেবার অধিকার ছিলো না, গণতন্ত্র ছিলো না। গণতন্ত্রের জন্য ভোট লাগবে সেই ভোট যাতে সবাই গ্রহন করতে পারে সেই ভোটের একটা ব্যবস্থা করতে হবে এটাই তাদের (অন্তবর্তীকালীন সরকারের) প্রধান কাজ।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রত্যক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি সংখ্যানুপাতিক পক্ষ থেকে যাতে আমরা প্রতিনিধি সেই ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার। পাশের দেশ নেপালে তাদের সফল বিপ্লবের পরে তারা গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসে সরকার গঠন করেছে, তারা সংসদের পাশাপাশি উচ্চ কক্ষ অর্থা সেখানে দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সংসদে প্রত্যক্ষ আসনের পাশাপাশি যদি সংখ্যানুপাতিক পক্ষ থেকে কোনো দল কত শতাংশ ভোট পাচ্ছেন সেই হিসেবে নির্দিষ্ট সংখ্যক উচ্চ কক্ষে তারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাহলে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্বের জায়গা নিশ্চিত হবে, সমাজে নানা ধরনের নানা পেশার মানুষ অনেক বেশি গণতান্ত্রিক অনেক বেশি প্রতিনিধিত্ব এবং অনেক রাজনৈতিক দল তারাও কিন্তু সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবার সুযোগ পাবে।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গনসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আবু ইউসুফ সেলিম বক্তব্য রাখেন। আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, জেএসডির মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, তানিয়া রব, কে এম জাবির প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।