রাজধানীর গুলশানের এক অভিজাত হোটেলে বুধবার রাতে নায়ক ও রাজনীতিক সোহেল রানার আয়োজনে মত বিনিময় সভায় উপস্থিত রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার লোকজনের কথায় উঠে এসেছে, দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, তা সংরক্ষণ করতে হবে। তারা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের কেমন করে জাগ্রত রাখা যায়, সেটাই আমরা চাই।
তারা উল্লেখ করেন, দেশের সবগুলো ইনস্টিটিউশনকে নষ্ট করা হয়েছে, আজ্ঞাবহ করা হয়েছে। সেগুলো সংস্কার করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ নায়ক সোহেল রানার নেতৃত্বে একটি প্লাটফর্ম করা হবে। সেখানে ১ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ করার প্রস্তাবও গৃহীত হয়। তারা বলেন, কিংস পার্টির মতো হাস্যকর কোনোকিছু আমরা করতে চাই না। আমরা জনআকাঙ্খার বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে চাই।
নতুন রাজনৈতিক দলের বিশেষ সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার ইকরামুল খানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত মতবিনিময় সভায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ওরা এগারো জন’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক, প্রযোজক ও নায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেন, আমরা অতীত নিয়ে নয়, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা নতুন একটি পলিটিক্যাল ফ্রন্ট করার ব্যাপারে সবাই একমত। তবে নাম, পতাকা, প্রতীক, গঠনতন্ত্র-উপবিধি কী হবে, সেটা ভাবার জন্য একটু সময় নেবো।তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের রাজনৈতিক ফ্রন্ট নতুন হলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা কিন্তু পুরনো।তিনি সাবেক মন্ত্রী দিদার বখত ও গোলাম সারোয়ার মিলনের উদাহরণ টেনে বলেন, তাদের রয়েছে বিশাল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।এরকম আরো অনেকেই আমাদের সাথে আসবেন, যদি আমরা জনপ্রত্যাশা পূরণ করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে কাজ করি।
তিনি বলেন, পরিবারতন্ত্র থেকে বেরিয়ে সত্যিকার গণতন্ত্রের পথে আমরা হাঁটব।তবে পরিবারের মধ্যে কেউ যোগ্য থাকলে তাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ণ করব।আমরা সুযোগসন্ধানীদের পথ পরিহার করে সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য কিছু করতে চাই।তিনি বলেন, দেশের মানুষ কী চায়, তাদের মনের কথাগুলো আমরা বলব।আমরা সুশাসন ও সরকারের জবাবদিহিতার পাশাপাশি দলে গণতন্ত্রচর্চা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, ভালো কিছুর জন্য রক্ত দিতে হয়।শিক্ষার্থীরা কোনো পোস্টার বা ব্যানার করে করে মানুষকে দাওয়াত দেয়নি।তাদের কর্মসূচি জনআকাঙ্খার সমার্থক বলেই জনগণের সার্বিক সমর্থন লাভ করে তারা চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়েছে।তিনি বলেন, সবকিছু বৈষম্যহীন করা যাবে না। তবে বৈষম্যের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী দিদার বখত বলেন, আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান।আমার বাবা ও চাচা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন।আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, আমি শেরে বাংলা ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখেছি।শেখ মুজিবুর রহমান, প্রেসিডেন্ট জিয়া, প্রেসিডেন্ট সাত্তার ও প্রেসিডেন্ট এরশাদের সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলাম।১৯৬৬ সাল থেকে সাংবাদিকতা শুরু করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই।শরীরে এখনও বুলেট বহন করছি। মুক্তিযুদ্ধে আমার দুটি ভাই নিহত হন।বাংলাদেশ তো বটে, ভারতের প্রতিথযশা রাজনীতিবিদরাও আমাদের বাড়িতে আসতেন। আমার বড় ভাই কবি সিকান্দার আবু জাফর।
তিনি বলেন, তরুণ সমাজের মধ্যে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার যে জাগরণ দেখছি, তা যেন জাগরুক থাকে সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে, এটা ধরে রাখার জন্য আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।তিনি বলেন, সোহেল রানা হলেন এরশাদের পর সিনিয়র রাজনীতিক। তার উদ্যোগে দেশে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসুক, এটা আমি মনেপ্রাণে চাই।
সাবেক মন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, আমরা রাজনীতিতে একটা গুনগত পরিবর্তন আনতে চাই।এজন্য এমন একটি দল দরকার, যারা নতুন কিছু দিতে পারে।তিনি বলেন, কিংস পার্টির তকমা যেন পেতে না হয়, সেরকম বলিষ্ঠ কিছু করতে চাই। সেটা যেন তৃণমূল বিএনপি বা বিএনএম’র মতো না হয়।গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্খা, দেশবাসী বা বিশেষ করে তরুণদের যে আকাঙ্খা তার প্রতিফলন যেন ঘটে এমন কিছু করতে চাই।
সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ তোশারফ আলী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিধ্বস্ত।আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলোকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে।তিনি বলেন, একটি সরকার সব করেছে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি বিশ্বাসী নই।ফ্যাসিস্ট বুঝতে হলে হিটলার, মুসোলিনীকে বুঝতে হবে।তিনি প্রশ্ন রাখেন, আমাদের দেশে যেভাবে অফিসাররা দেরিতে অফিসে আসেন, সেটা কি হিটলার মানতেন?
তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল করা দরকার, এটা তিনি বলবেন কেন? এটা বলার জন্য তো অন্য লোক আছে।তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কেনাকাটা ও রাস্তাঘাটসহ উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।আমলারা এখন নোটিং করেন না বলে অভিযোগ তার। উকিলের মামলা বাড়ানোর জন্য ৫০০ লোকের নামে মামলা হয়ে যায়।তিনি বলেন, ডায়নোসরের মতো এত বড় প্রশাসনের দরকার নেই।এক তৃতীয়াংশ ছাটাই করতে হবে। যদি করতে চান, আমি আছি। তিনি সোহেল রানার নেতৃত্বে ভালো কিছু হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক উপ মহাপরিচালক ড. ফোরকান উদ্দিন আহমেদ বলেন, অবসর জীবনে লেখালেখির জগতে আছি। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষকে দেখি।এক সময় ছা্ত্রদলের রাজনীতি করতাম।দেশপ্রেমিকদের পছন্দ করি। রাজনীতিতে হিংসা-প্রতিহিংসা পছন্দ করি না।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আমরা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরীক।সোহেল রানা ভাই যদি নতুন দল করেন, তার প্রতি শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা থাকলো।দল করলে এবং আমাদের সাথে যদি জোট হয়, তখন একসাথে কাজ করতে পারব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত পরিচালক ও বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওস্তাদ শেখ সাদী বলেন, স্বাধীনতার ৫২/৫৩ বছরেও আমরা বলতে পারছি না, আমাদের সন্তানদের জন্য কি দিয়ে যাচ্ছি। সর্বত্র গ্রুপিং।কিছু মানুষ সততার সাথে কাজ করতে চাইলে তাকে সরিয় দেয়া ও বসিয়ে দেয়ার প্রবলতা সর্বত্র লক্ষণীয়।তিনি বলেন আমি আপনাদের সুন্দর চিন্তা ভাবনার সাথে একমত। আমাদের আত্মশুদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, রাজনীতির কথা শুনলে আমার ঘাম আসে।আমি ব্যবসায়ী হয়েও বিগত সরকারের আমলে চরম নির্যাতিত হয়েছি।২ বার জেল খেটেছি।আমি কখনো মাদক স্পর্শ করিনি।অথচ আমাকে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়।তিনি বলেন, সোহেল রানা ভাইয়ের নেতৃত্বে ভালো কিছু হবে বলে আমার বিশ্বাস।
কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে একাধিকবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নুরুল কাদের সোহেল বলেন, জি এম কাদেরকে এখন মানুষ বিশ্বাস করতে পারছে না।সোহেল রানা ভাই নেতৃত্ব দিলে আশা করি ভালো কিছু হবে। সোহেল রানা ভাই যে দেশ নিয়ে ভাবছেন, এই ভাবনাটা আমাদেরকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা বলেন, রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মানুষ ঘৃণা করে। আমরা অনেক জেলা-উপজেলা নিয়ে কাজ করি।সোহেল রানা ভাইয়ের নেতৃত্বে ভালো কিছু হলে তাকে স্বাগত জানাই।
বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী যে, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সোহেল রানা স্যারের নেতৃত্বে ভালো কিছু হবে।সোহেল রানা আমাদের যে নির্দেশ দেন, সেই অনুযায়ী কাজ করতে প্রস্তুত আছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন গণদলের চেয়ারম্যান গোলাম মওলা চৌধুরী, লে. কর্নেল অব. সাব্বির আহমেদ, জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়, জাতীয় পার্টির নেত্রী মনোয়ারা তাহের মানু ও কাজী শামসুল ইসলাম রঞ্জন প্রমুখ সহ আরো অনেকে।