পতিত স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ প্রশাসনের মধ্যে থাকলে দেশকে তারা বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,আপনারা মহানুভতা, মানবতা অবশ্যই রাখবেন কিন্তু যারা মানবতা দেখায়নি যারা শেখ হাসিনাকে উদ্বুদ্ধ করেছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে গুলি করতে সেই স্বৈরাচারের কীটপতঙ্গ যদি প্রশাসনের মধ্যে থাকে তাহলে তারা আপনাদেরকে প্রতি পদে পদে বাধা দিবে। তাদেরকে অতি দ্রুত চিহ্নিত করে গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে যারা ছিল অথবা যারা নিরপেক্ষ ছিল তারা যে দলেরই সমর্থক হোক না কেন এ সমস্ত মেধাবী লোকদেরকে আপনারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসান। সেটা না হলে দেশকে তারা বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। কারণ তাদের পিছে একটি বিশেষ পরাশক্তির প্রভু আছে যাদের আশ্রয়ে তারা আছে।
রিজভী বলেন, পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থান যাতে না ঘটে। আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়,আর যেন কোন মায়ের সন্তানকে হত্যা না করা হয়। শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন, শেখ হাসিনার পুনরুত্থান মানে দেশ হবে এক ভয়ঙ্কর বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমি যাতে তৈরি না হয় তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দলই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে তাদেরকেও অন্তরে সততার আলো নিয়ে খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে। সেই পথ,সেই মত তৈরি করতে হবে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে মাঠ দরকার সেটি তাদেরকে তৈরি করতে হবে। তবে সেটি যেন প্রলম্বিত না হয় দীর্ঘায়িত না হয়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম উর্মি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লালমনিরহাটের উর্মি তিনি আবু সাঈদের মত একজন মহিমান্বিত আত্মদানকারী, সাহসী বীর তরুণ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র যে ব্যক্তি অকাতরে নিজের জীবন দিয়েছে বুক চিতিয়ে হাসিনার পুলিশের গুলি বরণ করেছে তাকে বলছে সন্ত্রাসী। তাকে বলছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। এদের মত লোকজনই তো প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো প্রশাসনের একটি অংশ তাহলে আজকে সচিবালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিভাবে এই স্বৈরাচারের দোসররা একটি বিপ্লবের সরকারকে একটি গণআন্দোলনের সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইবে সেটা তো আমরা প্রত্যেকেই জানি।
প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, প্রশাসনে যাদের নতুন প্রমোশন হচ্ছে যারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন এবং যাদের পদায়ন হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- আওয়ামী প্রশাসন লুট করেছে জনগনের টাকা অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে আপনারা বঞ্চিত ছিলেন আপনাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছিল বিরোধী দলের লোক হিসেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কায়দায় করেছে তাদের একেক জন সচিব আমরা খবরের কাগজে দেখছি তাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার কাহিনী একজন ডিসি বা অ্যাডিশনাল কমিশনার কিংবা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার আমলে যে কাজ করেছে আপনারাও যদি সেই পথ অনুসরণ করেন তাহলে আপনাদেরকেও ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। আপনারা যদি মনে করেন আমরা এতদিন বঞ্চিত ছিলাম এখন ভাগ বাটোয়ারা করে সেটি পূরণ করবো। তাহলে কিন্তু এই জাতি চিরদিনের জন্য অন্ধকারে চলে যাবে এবং ওই যে পতিত স্বৈরাচার এরা নানাভাবে আসার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে মাফিয়া অর্থনীতি তৈরি করেছিল যার মধ্য দিয়ে মাফিয়া ব্যবসায়ীরা একের পর এক ব্যাংক তারা একত্রীকরণ করেছে। তারা এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের অর্থনীতির মধ্যে দেশকে ঠেলে দিয়েছে ।এক এস আলম ৮ থেকে ৯টি ব্যাংক আত্মসাৎ করেছে। এখানে জনগণের যে টাকা সে আত্মসাৎ করে নিজের বিভিন্ন কাজে লাগিয়েছে এবং বিদেশে পাচার করেছে। এক এস আলম স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ বিলিয়ন টাকা লোপাট করেছে। এটা তো আজকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে। সুতরাং এই সমস্ত বড় বড় রুই কাতলা যারা জনগণের সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করে মাফিয়া অর্থনীতি তৈরি করেছে এবং শেখ হাসিনার যে লুণ্ঠনের নীতি, হরি লুটের যে নীতি এটাকে তারা বাস্তবায়ন করেছে।তারা কিন্তু বসে নেই লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে তারা পাচার করেছে। সেই টাকা দিয়ে তারা নানা ভাবে নানা কায়দায় দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চাচ্ছে।
রিজভী বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় সিঙ্গাপুরে একটি লবিস্ট ফান্ড ভাড়া করেছে তাদের পক্ষে ওকালতি করার জন্য। এগুলো কিন্তু খুব সাধারন কথা নয় এগুলো অত্যন্ত ইঙ্গিত বাহি কারণ ওদের অনেক টাকা আছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা:রফিকুল ইসলাম,নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা:জাহিদুল কবির,যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, আরিফুর রহমান তুষার,ছাত্রদলের নেতা ডা:আব্দুল আউয়াল মাসুদুর রহমান মাসুদ, রাজু আহমেদ প্রমুখ।
এসএটি/এসএইচ