বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই আমরা যেন এক ধরনের ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। জনগণ যেন একটা প্যারাডক্সের মধ্যে, দেয়ালের মধ্যে, কুয়াশার মধ্যে আছে। এই শুনলাম সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছে তার কয়েকদিন পর শুনলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসে ঘুরাফেরা করছে আবার শুনলাম তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত গ্রেফতার হয়েছে তার দুই তিন দিন পরে শুনলাম তিনি গ্রেফতার হননি। জনগণের সাথে এই প্রতারণা কীসের জন্য? জনগণের সামনে এই লুকোচুরি কীসের জন্য? এটাতো জনগণ জানতে চায়।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণের ভোট, জনগণের ম্যান্ডেট যারা মাইকিং করে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে নিজেদের মত করে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়নি। শেখ হাসিনার আমলের মন্ত্রীরা যারা অপরাধ করেছে অবিচার করেছে তাদের ধরা না ধরা গ্রেপ্তার হওয়া না হওয়া এইটা নিয়ে এই ধরনের লুকোচুরি কেন খেলছেন? জনগণ কি প্রশ্ন করতে পারেনা? জনগণ কি জানে না কোনো না কোনো জায়গা থেকে পুতুল খেলার নাচের মত আপনাদের সুতোর টান দিচ্ছে। সেই সুঁতোর টানে আপনারা নাচানাচি করছেন। এটাই তো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাটে সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপি'র এই মুখপাত্র বলেন, আজকে দেখলাম রাজশাহীর সারদাতে শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫২ জন পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে কিন্তু বাদ দেয়ার কথা ছিল ৮০৩ জনকে। এদেরকে কেন নিয়োগ দেয়া হয়েছিল কারণ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, জয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে,তাদের টাকা পাচারের বিরুদ্ধে তাদের সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে যারা লিখবে এই পুলিশ কর্মকর্তারা তাদেরকে অত্যাচার করবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আঙ্গুলের ভেতরে সুই ঢুকাবে তাদের কানে পায়ে ইলেকট্রিক শর্ট দিতে হবে এই কারণে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সুতরাং তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া তাদেরকে চাকরিতে না নেয়া এই দাবি কি অন্যায় দাবি?
তিনি বলেন, বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছিলেন, চৌধুরী আলম জনপ্রতিনিধি ছিলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি মন্ত্রী ছিলেন তাকেও ৬২ দিন আটকে রেখে ইন্ডিয়াতে পাচার করে দেয়া হয়েছিল। আমরা কি আবার সেই আমলের পুনরাবৃত্তি করবো? আমরা কি সেই দুঃসহ,দুর্বিষহ পরিস্থিতি আবার আনবো?আইনের শাসনের বদলে যুবলীগের শাসন চলবে, আওয়ামী লীগের শাসন চলবে।আমাদের এত আত্মত্যাগ ১৫-১৬ বছর ছাত্রদল যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, বিএনপি নেতাকর্মীরা অকাতরে জীবন দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী,পুলিশ আর র্যাব। সেই শাসন কি আবার ফিরে আসবে। সেই শাসন আর ফিরে আসতে পারেনা।
রিজভী বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনও কিন্তু বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়াতে পারেনি। এই মামলা ছিল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা তারপরও তার বিরুদ্ধে মামলা এখনো প্রত্যাহার হচ্ছে না কেন? এটার কারণ কি দেশবাসী জানতে চায়? আপনাদের অন্তরের ভাষা আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সবাই সমর্থন দিয়েছি। এই সমর্থনের পরেও তারা যদি আলো ছায়ার মধ্যে দুলতে থাকে তাহলে তো সামনের দিকে একটা বিপজ্জনক বার্তা বয়ে নিয়ে আসবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে শেখ হাসিনার দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারে মন্থরগতি লুকিয়ে থাকা আওয়ামী দোসরদের নীল নকশার অংশ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু,সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদল নেতা ওমর ফারুক কাওসার, ছাত্রদল নেতা তৌহিদ আওয়াল।