দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মো. জামিনুর রহমানকে। দুর্নীতির নানা পন্থা অবলম্বন করে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তবে সাবেক এমডিকে অপসারণ করা হলেও তরিয়তে বহাল রয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. শাহেদ আলমগীর ও সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার।
গত ২০ আগস্ট ‘তিন কর্মকর্তায় ‘জিম্মি’ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসে। প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর পাঁচ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন।
তদন্তের বিষয়ে সাজ্জাদ হোসেন দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, আমাদের তদন্তের কাজ চলছে। এখনও পুরোপুরি তদন্তের বিষয়ে বলা যাচ্ছে না, যে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না। তবে আমরা আমাদের মতো করে কাজ করছি।
সূত্র বলছে, ব্যাংকে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ার মূল কারিগর মো. শাহেদ আলমগীর ও আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার। তাদের দুজনকে ব্যবহার করে ব্যাংক জিম্মি করে রেখেছিলেন শেখ মো. জামিনুর রহমান। উত্তরপত্র টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য, অবৈধভাবে উচ্চমূল্যে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, নিজের নির্ধারিত কমিশন ছাড়া ফাইলে হাত না দেওয়া, ব্যাংকের অর্থ ও সম্পদের ক্ষতি, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্বৃত্তায়ন, অর্থের বিনিময়ে বদলি-পদোন্নতি নিয়োগ, মামলা বাণিজ্য, অর্থের বিনিময়ে শাস্তি মওকুফ করাসহ নানা পন্থা অবলম্বনে বড় ভূমিকা ছিল এই দুই কর্মকর্তার।
শুধু তাই নয়, তাদের দুর্নীতির কাজে কেউ বাধা দিলে হেনস্তা করাসহ দেশের বিভিন্ন শাখায় বদলি করা হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিলেন এই সিন্ডিকেট। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় অনিয়ম, দুর্নীতি সম্পর্কে অবগত থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, সাবেক এমডি শেখ মো. জামিনুর রহমান বেপরোয়া হওয়ার পিছনে মো. শাহেদ আলমগীর ও আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার বড় হাত রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে এই সিন্ডিকেট। তাদের দৌড়াত্মে সবাই অসহায় ছিল। প্রকাশ্যে দুর্নীতি করলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এমডিকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে তার দুই ঘনিষ্ঠ এখন বহাল রয়েছে। আমরা এখনও শঙ্কায় রয়েছি। কারণ দুর্নীতির নানা পন্থা তাদের জানা। তারা এখনও দুর্নীতি করতে পারে। ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গত ২০ আগস্ট দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর হোম লোনের জন্য নেওয়া হয় ২ লাখ টাকা কমিশন। মোটরসাইকেল লোন দেওয়ার সময় কমিশন ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংকের ল্যাপটপ ২ লাখ টাকা করে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৭০ হাজার টাকা। প্রধান কার্যালয়ে ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারী এমপ্লয়িদের দুপুরের খাবার বাবদ ৪০০ টাকা বিল করা হয়। অথচ, সরবরাহকৃত খাবারের প্রকৃত মূল্য ১০০ টাকা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব দুর্নীতি সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শেখ মো. জামিনুর রহমান, মো. শাহেদ আলমগীর ও আল্লামা মোহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া তানহার।
এছাড়ও সাসপেনশন তুলতে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা নেওয়া হয়। পদ অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে (১ থেকে ৫ লাখ) বদলি করা হয়। ব্যাংকের সকল শাখা অফিস, জেলা অফিস ও প্রধান কার্যালয়ে ৬০০ অ্যাটেনডেন্স মেশিন কেনা হয়েছে। যার প্রতিটির প্রকৃত মূল্য ১১ হাজার টাকা। সেখানে প্রতিটি অ্যাটেনডেন্স ২৮ হাজার টাকা কেনার রশিদ দেখিয়েছেন তারা।