ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে ৫আগস্ট বিদায় নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরইমধ্যে ৬ আগস্ট আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বিএনপি। বিএনপির এই আহ্বান ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এরপর ৮ আগস্ট থেকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতারা সম্প্রতি একে অপরকে কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে চাপ না দেওয়ার কথা বলে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি অযৌক্তিক। যদিও স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিএনপি তাদের নির্বাচন দাবির নির্ধারিত সময়সীমা থেকে ইউটার্ন নিয়েছে। দলটির মহাসচিবসহ সিনিয়র বেশকয়েকজন নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে নিদিষ্ট করে কোনো সময়সীমা বেধে দেয়নি। বরং তারা বলেছেন একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং সেই লক্ষে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবে। তবে শুরু থেকেই বিএনপি ছাড়া জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে; কিন্তু সেই সময়টা তাদের সংস্কার কাজের উপর নির্ভর করবে। অবশ্য এমন বক্তব্যে অখুশি বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের আন্দোলন সংগ্রাম ও ভোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়, একটি জালিম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি অন্য আরেকটি জালিম সরকারের হাতে বন্দি হওয়ার জন্য নয়। সরাসরি তারা বিএনপির নাম উচ্চারণ না করলেও তা বুঝতে সমস্যা হয়নি যে, জামায়াতের শীর্ষ নেতার এমন মন্তব্য বিএনপিকে কেন্দ্র করেই।
এরপর হঠাৎ করে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভাগীয় পর্যায়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে সার্বিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা বার্তায় দলের নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। এমনকি আগামী নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচন হবে বলেও নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলা হয়; দীর্ঘদিনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের যে জায়গায় পৌছেছে কতিপয় বিপদগামীদের হঠকারিকায় তা বিনষ্ট হতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি দলের যে সব নেতা-কর্মী দলের ভামূর্তি নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও কঠোর নির্দেশনা দেন তারেক রহমান।
গত রোববার বিকেলে সাতক্ষীরার কলারোয়া পাইলট হাইস্কুল ফুটবল মাঠে এক জনসভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের মানুষের ভোট ও কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জনগণের আন্দোলন, জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঠিকই হয়েছে। কিন্তু এখনো আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্থাৎ জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এখনো অর্জিত হয়নি। কাজেই আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে দেখা যাচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দল পার্শ্ববর্তী দেশের ফাঁদে পা দিয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন যাবত উল্টোপাল্টা বকছে।
এতেই শেষ নয়, দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আন্দোলন-সংগ্রামে যারা পাশে ছিল এমন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। উদ্দেশ্য সমমনা দলগুলোকে আগামী দিনেও পাশে ধরে রাখা; যাতে দলগুলো জামায়াতের দিকে ঝুঁকে না যায়। বরং আগামী দিনে জাতীয় সরকার গঠনে সবাইকে রাখা হবে এমন কথাও দিচ্ছেন বৈঠকে থাকা নেতারা। মূলত সরকারবিরোধ যুগপৎ আন্দোলনে নেমে বিএনপি যে ৩১ দফা রুপরেখা তুলে ধরেছিল এখন সেটার উপর গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার কাজে এগোতে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। কেননা রাজনীতিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে ইসলামী জোট গঠনে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী।
এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের শিবচরে জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক পথসভায় পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর শাসন ব্যবস্থা, কর্ম পদ্ধতিকে ‘যে লাউ, সে-ই কদু’ বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদ সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘লঙ্কায় যে যায়, সে-ই রাবণ’ হয়। পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর অতীত আমলনামা খুব একটা ভালো না। আমরা দেখতে পাচ্ছি এক ফ্যাসিবাদ গেলেও আরেক ফ্যাসিবাদ তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা চাই না ‘যে লাউ, সে-ই কদু’ হোক। কোনো ফ্যাসিবাদ নয়, আমরা টেকসই গণতন্ত্র, ভোট ও নাগরিক অধিকার চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু। পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনকে কিছুতেই পরিবর্তন হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে কে কার সঙ্গে থাকবে কি থাকবে না সেটা বিষয় নয়; বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো একটি যৌক্তিক দাবিতে এগোতে চায় নাকি ঐক্যবদ্ধতার কথা বলেও নীরব থাকতে চায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি এমন কোনো রাজনৈতিক দল নয় যে, অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে। বরং বিএনপিই হচ্ছে সেই দল যে দলটির সঙ্গে অন্য দলগুলো হাঁটতে চায়। রাজনৈতিক দল হিসাবে সম্পর্ক কখনো বাড়বে, আবার কখনো কমবে। রাজনীতি হিসাবে এটা স্বাভাবিক বিষয়।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, রাষ্ট্র সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন নয়। যে উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার বিজয় হয়েছে আগে সেগুলো বাস্তবায়ন হতে হবে। দেশের আমূল সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। এসব নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নয়। নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমকে চলমান রাখতে নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ অবশ্যই সৃষ্টি করতে হবে। তার আগে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। যারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবে। একইসঙ্গে নির্বাচনের জন্য যেমন নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রয়োজন তেমনি রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার সরকার সে কাজটিই করছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলেও কথা উঠেছে।
অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কাজ সমাপ্তির দিকে নিতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে দলটির প্রত্যাশা স্বল্প সময়ের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষমতার পরিচয় দেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন; সহানুভূতি পেতে জামায়াত নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। নির্বাচনের আগে নিজেদের সংগঠিত করতে সময় নিতে চাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থানকে জোরদার করার পাশাপাশি রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে দলটির নেতারা। বিভিন্ন পেশাজীবী ও ছোট দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপিকে আটকাতে একটি জোট করার চেষ্টা করছে। তাই নির্বাচন নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না। অথচ আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই কোণঠাসা ছিল। যদিও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতারা সম্প্রতি একে অপরকে কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বিপরীতে জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে চাপ না দেওয়ার কথা বলছে।
আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকারও গঠন করে। সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভাঙেনি। ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরু হলে দলটিকে ছাড়ার জন্য বিএনপি ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানের কারণে জোট ভাঙেনি। আবার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের পাশেও দাঁড়ায়নি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে বিএনপি ও জামায়াত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা বিএনপির প্রতীকে প্রার্থী হন। রাতের ভোট খ্যাত ওই নির্বাচনের পর দু’দলের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ২০২২ সালে দু’দল অনানুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে। কিন্তু ধরপাকড়ে বিএনপি পাশে থাকছে না অভিযোগে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায় জামায়াত। পরের বছরের অক্টোবরে ফের যুগপৎ আন্দোলনে ফেরে। যদিও আগের ১০ বছরের মতো ২০২৩ সালের এবং গত ৭ জানুয়ারির এক তরফা নির্বাচনের পরে যুগপৎ আন্দোলনেও ব্যর্থ হয় বিএনপি ও জামায়াত।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের কথা আপাতত বাদ দিলাম। এই মুহুর্তে বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সরকারের দু:শাসন থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে আমরা যারা অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট রাজনৈতিক দল তারাও বিএনপির সঙ্গে মিলেমিশে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। যার ফলশ্রুতি এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি তার রাজনৈতিক হিসেবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছে।এরমধ্যে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে দখলদারি ও চাঁদাবাজীর। হাইকমান্ড সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছেন; কিন্তু নিজ থেকে পরিচ্ছন্নতার বিষয় না থাকলে নির্দেশনা নিয়ে কতক্ষণ। এছাড়া পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে খুব একটা সহজ হচ্ছে না দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করার আগে সংবিধানসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকেই। আমরাও চাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তার আগে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে বিএনপি। চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে অনেক অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, নেতা-কর্মীদের ত্যাগের বিনিময়ে এতোটা বছর দেশের সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় টিকে আছে দলটি।
এদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ভোট যদি হয়, হয়তো আপনারাই (বিএনপি) জিতবেন, কিন্তু আজ যে আন্দোলন হয়েছে সেটা শুধু ভোটের জন্য হয়নি। এ আন্দোলন হয়েছে মানুষের গণতান্ত্রিক, ভোটের অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার মতো একটা পরিবেশ তৈরির জন্য। এই লড়াইয়ে যদি একাত্ম হয়ে আসতে পারেন, তাহলেই হবে।
তিনি বলেন, শুধু স্বৈরাচার সরকার উৎখাতে লড়াই করিনি। আমরা সরকার ও দেশ বদলাবার লড়াই করছি। আমরা সরকার ও প্রশাসন বদলাবার লড়াই করছি। সরকার বদলেছে, এখন পরের কাজটা করতে হবে। যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। অথচ এখন পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী সরকার কোনও সংস্কারের কাজে হাত দেয়নি। আইজি বদলে নতুন আইজি এসেছে এটাকে সংস্কার বলবেন? ডিআইজির বদলে ডিআইজি, আর্মির চিফ বদলে নতুন আর্মি চিফ এলে এটাকে সংস্কার বলবেন? এগুলো সংস্কার নয়। আমি গুণগত সংস্কার চাই। সেই রকম একটা প্রশাসন চাই, সেই রকম একটা দেশ চাই।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের কোনো শেষ নেই। তবে মূল সংস্কার রাজনৈতিক দলকেই করতে হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্ধারণ করা উচিত।
অবশ্য বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, বর্তমান সময়ে বিএনপি নি:সন্দেহে বড় দল। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক আগেও ভালো ছিল এখনো ভালো। ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়েও বিচলিত নই। বরং এখন যারা তড়িগড়ি করে নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কার বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন এরা মূলত অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার পথে হাঁটছেন; যা আমরা অতীতে ১/১১ এর সেনা সমর্থিত শাসনামলে দেখছি।