ঢাকা,   শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিন খাতে ক্ষতি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি

মো. মির হোসেন সরকার

আপডেট: ১৩:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তিন খাতে ক্ষতি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি

চলতি বছরের আগস্টে স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ আরও বেশ কয়েকটি জেলা। ঘোষণা ছাড়াই ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ায় এসব এলাকায় বাড়ি, ফসলি ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পরবর্তীতে এসব এলাকার মানুষ অবকাঠামো সংস্কার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে জীবিকা নির্বাহের সব সম্বল হারিয়ে তারা এখন হতাশা ও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও অর্থ বিতরণ করা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে আবারও আগের অবস্থায় কতটুকু ফিরতে পারবেন; তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক তথ্য বলছে, এবারের বন্যায় ২৩ জেলার কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলায় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এসব জেলার অন্তত ২০ শতাংশ ফসলি জমি বন্যায় আক্রান্ত। ক্ষতি হওয়া আবাদি জমির মধ্যে রয়েছে-আউশ ৭৪ হাজার ১১৬ হেক্টর, রোপা আমন দুই লাখ ৩৫ হাজার ৬৬৭ হেক্টর, বোনা আমন ৩৬ হাজার ২৪৮ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ৪৪ হাজার ৯৯১ হেক্টর। এছাড়া শাক-সবজি ১৫ হাজার ৫৬১ হেক্টর, আদা ১৬১ হেক্টর, হলুদ ২৪৬ হেক্টর, আখ ৬৫৭ হেক্টর, পান ৬৪৭ হেক্টর, ফলের বাগান ১১ হাজার ৮০০ হেক্টর, মরিচ ১২৭ হেক্টর, তরমুজ ৫৬ হেক্টর, পেঁপে ২৩ হেক্টর, ভুট্টা তিন হেক্টর, পেঁয়াজ এক হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন টমেটো ১৫ হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭ হাজার ৮২২ হেক্টর জমির শাক-সবজি বিনষ্ট হয়েছে। এ পর্যন্ত কৃষি খাতে আর্থিক ক্ষতি অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, এবারের বন্যায় ২৩ জেলার কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩শ ৪৬ কোটি টাকা।

ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সচিবের অনুমতি নিয়ে কথা বলবেন বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে এ পর্যন্ত আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ১২টি জেলার ৮৬টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। বন্যায় জানমালের ক্ষতিসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে অনেক গবাদিপশুর মৃত্যু এবং ভেসে যাওয়াসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার মানুষ তাদের ইতিহাসেও এমন বন্যা দেখেননি। এই বন্যায় কৃষি খাতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বলার মতো না। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমিতে প্রায় ২০ লাখ টনের বেশি শস্য উৎপাদন সম্ভব হতো। যার পুরোটাই এখন বিনষ্ট। সরকারকে কৃষিকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সাবেক কৃষি সচিব ও কৃষি বিশেষজ্ঞ আনোয়ার ফারুক বলেন, এবারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট সংখ্যায় বলা সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে, বন্যায় কয়েক হাজার কোটির টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় যাদের কৃষি খামার ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিনা সুদে কৃষকদের মধ্যে অর্থ বিতরণ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক ফসলের বীজ ও চারা বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। নতুবা বন্যাদুর্গতদের পক্ষে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।

প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়ে দেশ। যদিও বন্যার আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, যা সম্পর্কে সরকার সব সময়ই অবগত। তবে অবহেলা আর দুর্নীতির মহাসমুদ্রে ডুবে থাকায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে ধীরগতি দেখা দেয়। যার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে জনগণ। এমনিতেই বন্যা এদেশের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অন্তর্রর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রদূতের সাথে এক বৈঠক শেষে তিনি বলেন, পানি ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা বাড়াতে যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নদী ব্যবস্থাপনা, বন্যা প্রতিরোধ ও অবকাঠামো প্রকল্পে একসঙ্গে কাজ করা যাবে। পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের মতো বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা জরুরি।

সর্বশেষ

Advertisement

সর্বাধিক জনপ্রিয়