বাংলাদেশে কোনো একটি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা দখলের যে পুরনো ব্যবস্থা, সেটার পরিবর্তন খুব একটা হয় না। এবার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কমবেশি একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো, এমনকি দখলের মতো অভিযোগ উঠছে বিশেষত বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও অন্তবর্তীকালীন সরকার তো বটেই খোদ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে এ ধরনের ঘটনায় কোনো ছাড় না দেয়ার কথা। কিন্তু এতে করে কি চাঁদাবাজি-দলবাজি-দখলদারিত্ব বন্ধ হয়েছে? বাস্তবতায় অবশ্য সেটা দেখা যাচ্ছে না!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। অবশ্য প্রমাণ সাপেক্ষে কারো কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। দল থেকে বহিষ্কার অব্যাহত রয়েছে, ভেঙে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিও। তবুও থামছে না বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। চলছে ব্লেইমগেম রাজনীতি। সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্মীরা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় একে অপরের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। অথচ কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিগত ১৭ বছর ধরে যে সকল মামলা দেয়া হয়েছিল তার সঠিক তথ্য উপাত্ত জমা দিতে। এনিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়েছে দলটির দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতারা। অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মীরা সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীসহ ভিন্নমতের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন, কোথাও আবার মারধর করে টাকা দাবি করছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। যদিও অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। শোকজ করা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অব্যাহতি ও কোণঠাসা করে রাখার বিষয়ে আলাপ হয়। তারা বলছেন, ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ দেখিয়ে তাদের অব্যাহতি বা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে বিএনপিই। বিশেষত, যাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে বা বসিয়ে রাখা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নেতা। এ কারণে সাংগঠনিকভাবে প্রভাব না পড়লেও রাজনৈতিকভাবে আদতে দলের ক্ষতিই হবে। এর পুরো দায় তখন শীর্ষনেতৃত্বের দিকেই যাবে।
তবে বহিষ্কৃত এবং শোকজ পাওয়া নেতা-কর্মীর অভিযোগ, প্রভাবশালী নেতাদের অনুগত না হলে, ভিন্ন গ্রুপের প্রতি সমর্থন থাকলে বেছে বেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। ওই সব নেতা-কর্মীকে বেকায়দায় ফেলতে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছেন সিন্ডিকেটের নেতারা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং এলাকার ভুয়া লোকদের স্বাক্ষরে অভিযোগ দাখিল করা। আর ক্ষমতাবান সিন্ডিকেট কোনো অভিযোগ না তুলেই বহিষ্কার করছে হরহামেশা। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীর মধ্যে।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, রাজনীতিতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে। তবে বর্তমানের মতো বিএনপির দ্বিধাদ্বন্দ্ব এতটা আগে দেখা যায়নি। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। তবে সত্য এবং ন্যায্য কথা নিশ্চয়ই থাকতে হয়। পাশাপাশি রাজনীতিবিদদের যথাযথ কমিটমেন্ট জরুরি। সে কমিটমেন্টটি জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হয়। জনগণের নিকট কমিটমেন্ট না থাকলে রাজনীতিতে লাভবান হওয়া দুস্কর। এই মুহুর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তা ছাড়া কোনো দৃশ্যমান রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দেখা যাচ্ছে না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, আমরা যদি না বুঝি, আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতি কঠিন হয়ে যাবে। সবাইকে জনগণের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায় অবিচার করতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের মালিক জনগণ এ বিশ্বাস বিএনপিকে রাখতে হবে। স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, দুর্নীতিবাজ, নিপীড়নকারী চলে গেছে। আমাদের পরিবর্তন হতে হবে। আমরা আবার সে দিকে চলতে পারব না। দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা-আকাঙ্ক্ষা জেগেছে, যে নতুন সূর্য উঠেছে, সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে বেশি দিন টেকা যাবে না। এটি চিরন্তন সত্য কথা যে, বর্তমানে নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের। তবে বিএনপি তার সাংগঠনিক কৌশল দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে গত বছর কোটি টাকার মাছসহ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও টাঙ্গাব ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা আকরাম তসলিমের ঘের দখল করে নেয় স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে নিজের ঘের বুঝে নেয়ার সুযোগ পাবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন তসলিম। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দখলবাজ স্থানীয় শ্রমিকলীগ-যুবলীগের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালালে তসলিম ঘেরের দখল বুঝে নেন। কিন্তু মাত্র ৫ দিনের মাথায় পাগলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানার লোকজন এসে তসলিমকে উচ্ছেদ করে ফের আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছে মাছের ঘের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
নিজ দলের নেতা-কর্মীদের এমন কাণ্ডে দিশেহারা তসলিম সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, নিজের দলের লোকজন আমাকে আমার মাছের ঘের থেকে উচ্ছেদ করে আওয়ামী লীগের লোকদের বুঝিয়ে দিয়েছে এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে? যার লোকজন এটা করেছে সেই রানা ভাইকে একাধিকবার বলেছি, বুকে জড়িয়ে ধরে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনও ঘেরের কাছে যেতে পারি না।
শুধু তাই নয়, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় আলোচনায় থাকা ময়মনসিংয়ের গফরগাঁও-পাগলা উপজেলায় একের পর এক অপকর্মে জড়াচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। কোথাও কোথাও নিজ দলের লোকজনের অনিয়ম, দখল ও চাঁদাবাজির বলি হচ্ছেন খোদ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে দখল, মাদকের নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
এরসঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, উপজেলা দুটির নেতাদের ঢাকায় এনে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। ভবিষ্যতে কারও বিরুদ্ধে অন্যায়-অপকর্মে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতার হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে হাতবদল হয়েছে গফরগাঁও-পাগলায় দখল, চাঁদাবাজীর নেতৃত্ব। সাবেক একাধিকবারের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের সময় থেকে চলা ত্রাসের রাজত্ব এখনও চলছে। পরিবর্তন হয়েছে নেতৃত্বের। এতে আতঙ্কের মধ্যে আছেন এখানকার সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, দুই উপজেলা বিএনপি কমপক্ষে পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত। এসব গ্রুপের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সদস্য ও গফরগাঁও উপজেলার আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আল ফাতাহ খান, গফরগাঁও উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিকুর রহমান, পাগলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানা।
অবশ্য এদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগের আমলে এলাকামুখী ছিলেন না। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার মিশনে নেমে দলকে বেকায়দায় ফেলছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে টেনছেন কেউ কেউ।
এদের মধ্যে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক ও পাগলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মোফাখখারুল ইসলাম রানা ও গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগের অনুপ্রেবেশকারীদের কাছে টানা, এমনকি সাবেক এমপি বাবেলের সম্পদ পাহাড়া দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের।
যদিও এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে হার্ডলাইনে যাওয়ার কথা বলেছেন জেলা বিএনপির নেতারা। জেলা বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারাও এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব অপকর্মে ইন্ধনদাতাদের বহিষ্কার করার কথা বলেছেন নেতারা।
ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু বলেন, নানা ধরণের অভিযোগ আসার পর এই দুই উপজেলার নেতাদের ঢাকায় ডেকে কথা বলেছি। কয়েক জায়গায় বহিষ্কারও করা হয়েছে। নেতাদের বলা হয়েছে অপকর্ম বন্ধ না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, অনুপ্রবেশসহ যেসব অভিযোগ মোফাখখারুল ইসলাম রানার বিরুদ্ধে এসেছে সেজন্য তাকে আমরা কথা বলেছি। সে ১৫ দিনের সময় নিয়েছে। দেখি কি পরিবর্তন ১৫ দিনে করেন। এরপর না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি নেতা বাবুল বলেন, বাবেলের সম্পদ পাহারা দেয়াসহ যেসব অভিযোগ মুশফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে এসেছে সেটা নিয়েও কথা বলেছি। তবে এখনো প্রমাণ পাইনি। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কল করা হলেও মোফাখখারুল ইসলাম রানা ও মুশফিকুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসআপে এ বিষয়ে প্রশ্ন পাঠালেও কোনো জবাব আসেনি।
মাছের ঘের বেদখল হওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী সালে আকরাম তসলিম জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বিএনপি কর্মী শাহজাহান ও হাতেম আলী খানের নেতৃত্বে একদল লোক এসে ঘের দখল করে নেয়। এরা সবাই ডা. রানার গ্রুপের লোক। অভিযোগ আছে, শাহজাহান একাধিক মাদক মামলার আসামি। বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন। তার নেতৃত্বে স্থানীয় বামনখালীর বটতলা বাজারে অনিক টেলিকম ও মিষ্টির দোকানে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটিয়েছে। শুধু তাই নয়, পলাশ নামের স্থানীয় এক বিএনপি কর্মীর খামারের মাছ ও মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন শাহজাহান ও তার লোকজন।
অন্যদিকে গত ৮ আগস্ট গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পৃথক ঘটনায় জসিম ও সবুজ নামে দুইজন নিহত হন। এরা এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
তথ্যমতে, ৫ আগস্টের পর গফরগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী বারী প্লাজার মালিক আসাদুর রহমানের থেকে নিহত জসিম ১২ লাখ টাকা চাঁদা নেন। সেই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ আছে, গফরগাঁও পৌর বিএনপির সদস্য জয়নাল আবেদিন চানু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বিএনপি নেতা চানু।
চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে গফরগাঁও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধেও। যুবলীগ নেতা তাজমুন আহম্মেদের মাদক ব্যবসা এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন মুক্তার।
অন্যদিকে পাগলা থানা বিএনপির সদস্য কবির সরকার, ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার হোসেন শাওন, রফিকুল ইসলাম ওরফে কাইল্লা রফিকের নেতৃত্বে কান্দিপাড়া বাজারে দিনদুপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। স্থানীয় আসকর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মার্কেট দখল করে তালা লাগিয়ে দেয় এরা। উচ্ছেদ করে দেয় ভাড়াটিয়াদের। অভিযোগ আছে, দখল করা মার্কেটে দলীয় অফিস বানান কবির সরকার। অবশ্য ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের বিষয়ে সিরিয়াসলি পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমাদের কাজগপত্র তৈরি করা আছে। অপকর্ম করলেই বহিষ্কার।
অভিযোগ রয়েছে নেত্রকোনো জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক এর ছোট ভাই কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও। ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জেলা শহরে অবস্থিত জাসদের দলীয় কার্যালয় দখল করে নিজ দায়িত্বে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মাসুম যিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় মামলা দিচ্ছেন। মামলায় আওয়ামী লীগের যে সকল নেতারা বিগত দিনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে হামলা করেছেন তাদের বাদ দিয়ে নিরীহ নিরপরাধীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলা দিচ্ছেন। হুমকি দিচ্ছেন এই বলে যে; বাসা বাড়িতে থাকতে হলে এবং ব্যবসা করতে হলে তাকে কমিশন দিতে হবে; অন্যথায় মামলা থেকে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। তার এই হুমকি থেকে বাদ যাচ্ছেন না দলের নেতাকর্মীরাও।
সম্প্রতি ফজলুল হক মাসুম মোহনগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসককে ফোনে হুমকি দিয়েছেন; তাকে দেখে নেবেন বলেছেন। যদিও পরবর্তীতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম কার্ণায়েল বিষয়টি আলোচনা করে সমাধান করে দেন। শুধু তাই নয়; বিএনপি নেতা ফজলুল হক মাসুম উপজেলার বিভিন্ন জলাশয় (জলমহল) দখল করে নিজের লোকদের দায়িত্ব দিচ্ছেন। এমনকি ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ যে কমিউটার ট্রেন চলাচল করে আসছে সেই ট্রেন যিনি সরকারিভাবে লিজ নিয়েছিল তাকে সরিয়ে নিজের লোকদের দায়িত্ব দিয়েছেন। মূলত তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এদিকে মামলায় সাক্ষী হিসেবে নাম রয়েছেন এমন একাধিকজন সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেছেন, আমাদেরকে না জানিয়ে সাক্ষী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। আসামি হিসেবে যাদের নাম আছে তারা যোগাযোগ করার পর জানতে পারি আমাদের সাক্ষী রাখা হয়েছে মামলায়। না জানিয়ে মামলার সাক্ষী রাখার মূল কারণ হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে বাড়ি ভাঙচুরের সময় বলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু সরকার পতনের পর তিনি বলছেন তার বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অথচ উনার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব তৎকালীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের খুবই আপনজন হিসেবে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে। এখন কী কারণে বিএনপি নেতা ফজলুল হক মাসুম ভাঙচুরের বিষয়টি নিজের বাড়ি ভাঙচুর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তা বোধগম্য নয়। মূলত সামনে দলের বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে সে ক্ষেত্রে তিনি যেন কাঙ্খিত পদ পেতে পারেন এবং আমরা যেন কমিটিতে পদের কথা চিন্তা করে হলেও মিথ্যা সাক্ষ্য দেই সেজন্য তিনি আমাদের স্বাক্ষী হিসেবে রেখেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, মোহনগঞ্জবাসী মূলত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের রাজনীতি করে আসছিলো। যিনি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। যেখানে বাবর ভাইয়ের নির্দেশ হচ্ছে অহেতুক কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি না করার। কিন্তু তিনি নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়রুল হকের নির্দেশনা মেনে বাবর ভাইয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছেন, বিভিন্নভাবে হুমকিও দিচ্ছেন।
এছাড়াও মোহনগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের এক নেতাকে তার ঠিকাদারী লাইসেন্স দিয়ে দিতে উপজেলা যুবদল নেতা হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি যুবলীগ নেতা তার ঠিকাদারী লাইসেন্স দিতে অস্বীকার করার কয়েকদিন পর একটি মামলায় ওই যুবলীগ নেতাকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন হলে অনেকেই সঞ্চিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করছেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের অনেকেই বিএনপিতে অনুপ্রবেশকারী। যারা এতদিন দলের দুর্দিনে পাশে ছিলেন না, তারাই রাতারাতি দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি এমন অবস্থানে গেছে, দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামলানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করতে চাইলে, তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।