গত ১১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ছয় ফুটওভার ব্রিজ। চলমান রয়েছে আরও দুটির নির্মাণ কাজও। তবে উদ্বোধনের প্রায় এক মাস হতে চললেও ব্রিজগুলো অলস পড়ে থাকছে প্রায় সারাদিনই। ফলে অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফুটওভার ব্রিজগুলো কাজে আসছে না কারোরই।
পথচারীরা বলছেন, সঠিক স্থান নির্ধারণ ও স্থাপনার ঘাটতি থাকার করণেই মানুষের আগ্রহ নেই ফুটওভার ব্রিজে। পাশাপাশি অপরিকল্পিত নির্মাণে এসব ব্যবহারেও রয়েছে ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাজশাহীতে ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজন কতটা সেটা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। আর সে কারণেই মানুষ এসব ব্যবহারে আগ্রহী না। যদিও নগর কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, মানুষকে যানজট থেকে মুক্ত করতে ও এসব ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে তারা কাজ করছেন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, নগরীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ গেট, লক্ষ্মীপুর মিন্টু চত্বর নওদাপাড়া বাজার, তালাইমারী মোড়, বিনোদপুর মোড়, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সম্মুখ ভাগে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও নগরীর মনিচত্বর ও মিশন গার্লস স্কুলের সম্মুখের ফুটওভার ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুটি প্যাকেজে প্রায় ৫০ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীতে ৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লি. ও এমএসসিএল অ্যান্ড এমএসডিবিএল। প্রতিটি ফুটওভার ব্রিজের উচ্চতা ৫.৮ মিটার ও প্রশস্ততা ৩.৬ মিটার।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সড়ক বিভাজক দিয়ে পার হচ্ছেন নওগাঁ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবুল হায়াত।
তিনি বলেন, ব্রিজে কী করে উঠবো? আনেক সময় লাগবে। এছাড়াও আমি একা কীভাবে উঠবো। শুরতেই তো টাইলস দেওয়া। পনি পড়ে সেগুলো পিচ্ছিল হয়ে আছে। এখন আমি ডাক্তার দেখাতে এসে যদি আবার আহত হই সেটা আরও ঝামেলার। তাই একটু কষ্ট করে নিচ দিয়ে রাস্তা পার হওয়াই ভালো।
নগরীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজর শিক্ষার্থী মাহফুজুল হক বলেন, আমরাতো কেউ-ই এটা ব্যবহার করি না। মাঝে মাঝে উপরে উঠে ছবি তুলি, অনেকে টিকটক করে, ভালো লাগে তাই। কিন্তু ব্যবহার করবো কি করে। এগুলোর শুরতেই টাইলস দেওয়া হয়েছে। সিড়িগুলোও বেশ উঁচু। এগুলো ব্যবহারেও ঝুঁকি আছে। এছাড়াও আমাদের এখানে তা তেমন ট্রাফিকও নেই। তাই আমরা এগুলো ব্যবহার না করে নরমালি আগের মতোই রাস্তা পার হই।
এদিকে নগরীর তালাইমারি এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিপুণ রায়। তিনি বলেন, ওভারপাসটা তালইমারী চারমুখী হতে হতো। কিন্তু এটি সেটি নেই। আমাদের প্রয়োজন বড় রাস্তা ক্রস করার। কিন্তু আড়াআড়ি না দিয়ে সোজা দেওয়া হয়েছে। ফলে এটি আমাদের প্রয়োজনে পড়ছে না।
এবিষয়ে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে মানুষ এত যানজটের মধ্যেও এগুলো ব্যবহার করে না। জ্যামকে ওভারকাম করতে হবে এজন্যই এগুলো বানানো। আমরা মানুষকে এসব ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে কাজ করছি। এগুরো ট্রাফিক কন্ট্রোল যারা করে তাদেরকেও দেখা দরকার। তবে এগুলোর নিচে সিড়ি ও টাইলস দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। নির্মাণে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো আমি প্রকৌশল বিভাগকে বলে দিচ্ছি, তারা ঠিক করে দিবে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এমএসটি ইলমে ফরিদতুল বলেন, রাজশাহী নগরীতে ফুটওভার ব্রিজের ব্যবহার দরকার ছিল কী না সেটি আগে দেখতে হবে। যেটি আমাদের দরকার নেই, সেটি ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। যখন এগুলো প্রোপোজাল দেওয়া হয় সেখানেই ভুল ছিল। নিজেদের ইচ্ছেমত প্লানিং করা হয়েছে। এসব ব্রীজ ক্রিটিক্যাল পয়েন্টে দরকার হয়। সেক্ষেত্রে যে যে পয়েন্টে সিলেক্ট করা হয়েছে সেখানে মানুষ ব্যবহার করবে না, এটা সাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, এগুলো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা আগামীতে থাকতে পারে। তবে এখন এগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের যেখানে সমস্যা নেই, সেখানে আগাম সামাধানের দরকার কী? এগুলো বানানোর সময় প্লানিং ও ট্রান্সপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এর কেউ ছিল না বলেই এগুলো মিসিং হয়েছে। একারণেই এগুলো মানুষ ব্যবহার করছে না।
রাসিকের প্রশাসক ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের উপযোগী করতে কি কি প্রয়োজন সেগুলো যাচাইয়ের পর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই নির্মাণে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যে কারণে প্রায় ৪১ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। আর ব্রিজের নিচের অংশে যে টাইলস ব্যবহার হয়েছে সেগুলো আগের ডিজাইন মেনে করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলোর সংস্কার আনা হবে।