#রাঘববোয়ালরা নেই, তবুও তাদের ছায়া আছে
#সালমান এফ রহমানের সহযোগিরা এখনও সক্রিয়
#এক সপ্তাহে ডিএসই মূলধন হারায় ৫ হাজার কোটি টাকা
#বিভিন্ন মহল অনৈতিকভাবে বাজার কারসাজির কারিগর- ড. মোস্তফা কে মুজেরী
পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দীর্ঘদিনের। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে কখনো মুনাফা পেয়েছেন কখনোবা আশাহত হয়েছেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই তাদের আশাহত হওয়ার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। শেখ হাসিনার আমলে গত ১৬ বছরে রাঘববোয়ালদের দৌড়াত্মে পুঁজিবাজারে সূচকের পাশাপাশি মূলধন কমেছে অস্বাভাবিকভাবে। বিভিন্ন সময় বাজার সংস্কারে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল সংশ্লিষ্টরা। তবে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখেছিলেন। তবে সেই আশার আলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে না বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। বাজারে রাঘববোয়ালদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দালন করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামী কিছু চিহ্নিত রাঘববোয়ালরা পুঁজিবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান। তাদের ক্ষমতার প্রভাবে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। এই সিন্ডিকেট বাজারের মূলধন হাতিয়ে নেয়। তবে সালমান এফ রহমানের পতন হলেও তার কিছু সহযোগিরা এখনও পুঁজিবাজারের কলকাঠি নাড়ছে।
মো. সোহাগ নামের এক বিনিয়োগকারী দ্য সাউথ এশিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘সালমান এফ রহমান পুঁজিবাজার ধ্বংস করার মূল কারিগর। তার হাত ধরেই বাজার থেকে প্রতিমাসে শত শত কোটি মূলধন হারিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের গচ্ছিত টাকা নিজের মনে করে তার সহযোগিরা আত্মসাৎ করেছেন।’
সোহাগ আরও বলেন, ‘নতুন বিএসইসি কমিশনার যোগদান করার পর বাজার নিয়ে কতটুকু আশার আলো দেখাবেন সেটা বড় বিষয় নয়। বাজার ধ্বংসের পিছনে যারা দায়ী তাদের বিচার কতটুকু করতে পারবেন সেটাই মুখ্য বিষয়। এখনও পুরোনো খেলোয়াড়রা নতুন করে পুঁজিবাজার নিয়ে খেলছে।’
তথ্য বলছে, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় দরপতনের পর পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট দেখা দেয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশই এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে সাহস করছেন না। তারা মনে করছেন, সেখানে বিনিয়োগ করলেই কারসাজির মাধ্যমে তাদের টাকা লুটে নেওয়া হবে। আবার ব্যাংক খাতেও এক ধরনের আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে লুটপাট হওয়ায় সেখানেও চরম বিশৃঙ্খলতা বিরাজ করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার পর্যালোচনা করে জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর কিছুটা সূচকের উল্থান দেখা যায়। কয়েক সপ্তাহে বাজারে মূলধন বাড়ে। তবে সেটি স্থায়ী হয়নি। এরপর থেকেই সূচকের পাশাপাশি মূলধন হারাতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। গত সপ্তাহে সূচকের পতনের পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এ মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান দুর্দশার জন্য বিএসইসিরও দায় রয়েছে। বাজারে একটি বিষয় খেয়াল করা দরকার গত দুই বছর ধরে কোনো ভালো শেয়ারের দাম বাড়েনি। সব মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক মন্দ শেয়ারের দাম তিন-চার গুণ বাড়ানো হয়েছে।
গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন অনেক বেশি কারসাজি হয়। পুঁজিবাজারকে এখন পারফেক্টলি অপারেট করা উচিত। বিভিন্ন মহল অনৈতিকভাবে এই কারসাজির কারিগর। এই কারসাজিগুলো বন্ধ করতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নিয়ে আসা উচিত। পুঁজিবাজারে এখন আস্থার সংকট চলছে।’
ড. মোস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, ‘কারা কারসাজি করছে, এটা বিএসইসি ভালো করেই জানে। তারা চাইলেই এটা বন্ধ করতে পারে। পুরো বাজারকে এখন কঠোর মনিটরিং করা উচিত বলে আমি মনে করি।’