সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ভাই অধ্যক্ষ আব্দুল হক নূরু। রাষ্ট্রপতির ভাই হওয়ার সুবাদে কয়েক বছরেই বদলে গেছে তার জীবনযাত্রা ও অর্থ-সম্পদের চিত্র। মিঠামইন হাওয়ারের এই মুকুটবিহীন সম্রাটের রূপকথার গল্প ‘আলাদিনের চেরাগ’ এর গল্পকেও যেন হার মানিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুল, কলেজ, মার্কেট, মাছের ঘের, জলমহাল ও কৃষি জমি দখল করে বনে যান অঘোষিত সম্রাট। গড়ে তুলেছেন অর্থ-সম্পদের পাহাড়। বানিয়েছেন সম্রাজ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের ছোট ভাই প্রিন্সিপাল আব্দুল হক নূরু। তিনি মিটামইন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ। এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে মিটামইন মহাবিদ্যালয় নামে । কলেজ সরকারিকরণের আগে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সরকারি কলেজ। তারপর থেকেই বড় ভাই রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুবাদে কলেজের বিভিন্ন শাখায় প্রভাষক ও অন্যান্য পদে নিকট আত্বীদের নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় আব্দুল হক নূরুর উত্থান। আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। বনে গেছেন দুর্নীতির গুরু। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের সভাপতি বানান তিনি।
এছাড়াও দখলে নেওয়া হয় হাওরাঞ্চলের উপজেলা সদরের বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। টেন্ডার থেকে শুরু করে তিন উপজেলার সব বাজারে ইজারা থেকেও ভাগ নিতেন তিনি। এসব অপকর্মে জড়িয়ে ক্ষমতার পাশাপাশি ফুলে ফেপে উঠতে শুরু করে তার সম্পদ। কয়েক বছরেই সম্পদ বেড়ে যায় হাজারগুণ ।
শুধু এখানেই শেষ নয় তার অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা পন্থা। হাওরের স্থানীয় কৃষকদের কয়েক শত একর কৃষি জমি দখল করে করেছেন কৃষিকাজ। বর্ষা মৌসুমে জলমহাল দখল করে করেছেন মৎস শিকার। কৃষকরা এসব জমি বিক্রি করতে চাইলে অধ্যক্ষের ত্রাসে বিক্রি করতে পারেননি। বাজার মূল্যের চেয়ে এসব কৃষিজমি নামমাত্র মূল্যে তার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হতো। ক্ষমতার দাপটে কোনঠাসা করে রাখা হতো হাওরাঞ্চলের মানুষকে। এভাবেই দিনে দিনে হয়ে উঠেন তিনি হাওরের অঘোষিত সম্রাট। গড়ে তোলেন তার বিশাল সম্রাজ্য।
এতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার থাকার ফলে তার ভয়ে এলাকার কেউই মুখ খুলতে চাননি। তবে সরকার পতনের পর ধীরে ধীরে মুখ খলছেন অনেকে। এক কথা বলা চলে অনিয়ম আর দুর্নীতি করে টাকার পাহাড়ে ঘুমিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতির এই ভাই ও আত্মীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে তারা এখন সবাই পলাতক রয়েছেন। তাই অভিযুক্তকারীর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এসএটি/জেডএম