কাগজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে অফিসের ১৭ জন কর্মচারীকে ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ দেখিয়ে এক্সিম ব্যাংক থেকে ৮শ কোটি টাকা ঋণ নেয় ‘আফসার গ্রুপ’। এই ঋণের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে। একইসাথে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেয় আফসার গ্রুপ। এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। যার সবই পাচার করা হয়েছে বিদেশে।
যাদের নামে ঋণ নেয়া হয়েছে তারা হলেন- আফসার গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান সোমা নাসরীনের পিএস খন্দকার নিছার আহমেদ, আইটি ফার্মের প্রধান নির্বাহী সাজ্জাদ হোসেন, ম্যানেজার শাহজাহান, মার্কেটিং ম্যানেজার কামাল হোসেন, অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছায়েদুর রহমান, মো. ইয়ামিন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দি সাউথ এশিয়ান টাইমসকে জানায়, আফসার গ্রুপের বর্তমান কর্ণধার সোমা নাসরীন। তিনি প্রকাশ্যে বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। তবে আড়ালে তিনি ভয়ানক অর্থ লোপাটকারী। প্রয়াত স্বামী সাবেক সেনা কর্মকর্তা খন্দকার নূরল আফসারের নাম ব্যবহার করে হয়ে উঠেন আরও বেপারোয়া। অফিসের কর্মচারীদের নামে এক্সিম ব্যাংক থেকে ৮শ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঋণের বিপরীতে কোনো জামানত দেয়নি। বিশাল সংখ্যক এই ঋণ এখন খেলাপি ঋণে পরিণত।
তথ্য বলছে, আইটি সার্ভিস ব্যবসার নামে জয়েন স্টক কোম্পানি থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। কাগজে এসব নামীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবচিত্রে এর কোনো অস্তিত্ব নেই। তৈরি করা এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নাম দেওয়া হয় আফসার গ্রুপে বর্তমানে কর্মরত কর্মচারীদের। অথচ কর্মচারীরা জানতেন না তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কাগুজে এসব কোম্পানিকে আইটি বিজনেস হিসেবে দেখানো হয়েছে। কোনো জামানত না দিয়ে এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। যার সবই বিদেশে পাচার করা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুশ্চিন্তা আর হতাশাগ্রস্ত এসব কর্মচারীরা। সোমা নাসরীনের ভয়ে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
এসব ঋণের বিষয়ে আফসার গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা ঋণের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে একটি সূত্র দি সাউথ এশিয়ান টাইমসকে জানায়, আফসার গ্রুপের নানা জটিলতা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করা হয় না। কর্মকর্তারা সব বিষয়েই অবগত। চাকরি হারানোর ভয়ে তারা মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। চারিদিকে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি হলেও নীরব থাকা ছাড়া কর্মকর্তাদের কোনো উপায় নেই।
সূত্র বলছে, প্রয়াত খন্দকার নূরুল আফসার এক সময় টাকা দিয়ে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক পদ কিনেছিলেন। সেই সুবাদে ব্যাংকে তার আধিপত্য ছিল। আওয়ামী সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংকে নানা অনিয়ম করেছেন তিনি। তবে এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। সেই সূত্রে সম্পর্ক চলমান থাকায় গ্রুপটিকে ঋণ দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমা নাসরীনের স্বামী প্রয়াত খন্দকার নূরুল আফসার। তার নামেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ১৩ বছর তিনি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। একইসাথে তিনি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের এসোসিয়েশন রাওয়া ক্লাবের চেয়ারম্যান। এই পরিচয় ব্যবহার করে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক পদ কেনেন তিনি। এরপর থেকেই ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাটে হয়ে উঠেন মরিয়া। নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করে অনিয়মের বেড়াজালে নিজে হয়ে উঠেন অর্থ লোপাটকারী। ব্যাংকে রাখা গ্রাহকদের আমানত নিজের মনে করে আত্মসাৎ করেছেন তিনি। এছাড়াও উত্তরায় অবস্থিত ‘আনোয়ারা মান্নাফ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত করে ভোগবিলাসের খোরাক বানিয়ে রাখেন এই নূরুল আফসার। সেখান থেকেও কলেজের তহবিল থেকে টাকা লোপাট করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া বিপুল পরিমাণ এই ঋণ বিদেশে পাচার করেছেন মরহুম খন্দকার নূরুল আফসার।
প্রয়াত স্বামী খন্দকার নূরুল আফসারের মতো একই পথ অনুসরণ করেছেন সোমা নাসরীন। স্বামীর দেখানো অনিয়মের পথ অনুসরণ করে মানবতার আড়ালে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এসব বিষয়ে সোমা নাসরীনের সাথে কথা বলতে আফসার গ্রুপের মহাখালী নিউ ডিওএইচএস অফিসে যান এ প্রতিবেদক। তবে তিনি অফিসে নেই বলে জানান অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছায়েদুর রহমান।
এসএটি/জেডএম