এক সময়ে আর্থিক সংকটে থাকা মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ভাই মিরাজুল ইসলাম গত ১০ বছরে অবৈধভাবে আয় করেছেন শত শত কোটি টাকা। এ ছাড়াও দেশ বিদেশে গড়ে তুলেছেন একাধিক বিলাস বহুল বাড়ি, গাড়িসহ বিপুল সম্পদ।
এসব অবৈধ আয়ের অর্থ খরচ করে প্রথমে হয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনের এমপি। আর ছোট ভাই মিরাজুল ইসলামকে বানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এই দুই ভাইয়ের কলকাঠিতে নড়ত পিরোজপুরের রাজনীতি। তবে গত আগস্ট বিপ্লবের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান মহারাজ ও তার সমর্থকরা।
এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন ভুক্তভোগীরা। তিনি এলাকায় সবার পরিচিত মুখ। রাজনীতির মাঠে অতীতে তেমন কোন অবদান না থকেলেও এক সময়ে ছিলেন ছাত্রদলের ও পরে জাতীয় পার্টির (জেপি) ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজের কর্মী। জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বন ও পরিবেশ মন্ত্রী থাকাকালে এই মহিউদ্দিন মহারাজকে নিয়োগ দেয়া হয় তার ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) হিসেবে। সে থেকেই তার উত্থান শুরু হয়। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাদের ম্যানেজ করে তিনিও বনে যান আওয়ামী লীগ নেতা।
অভিযোগ রয়েছে, গত ১০ বছরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাদক, সোনা চোরাচালান, পদ বাণিজ্য ও অবৈধ পথে ভারতীয় পণ্য বেচাকেনা করে বানিয়েছেন শত শত কোটি টাকা। প্রচলিত আছে মহারাজ মিরাজের নিয়ন্ত্রণে চলত এলজিইডি কার্যালয়।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ এলজিইডির বেশিরভাগ কাজ করতেন এ দুই ভাই। শুধু তাই নয় টেন্ডারের কাজ না করেই অগ্রিম বিল তুলে নিতেন সবসময়। তাদের সেই সময়ের অপরাজনীতির শিকার হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
এই দুই ভাইয়ের সম্পদের সঠিক হিসাব নেই কারও কাছেই। যেখানে সেখানে জমি কিনে গড়ে তুলেছেন বিলাস বহুল অট্টালিকা। গত ১০ বছরে কি এমন আলাউদিনের চেরাগ পেলেন এই দুই ভাই এমন প্রশ্ন জনগণের।
পরিসংখ্যানে জানা গেছে, শুধুমাত্র পিরোজপুর জেলার সদর, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, নেছারাবাদ, ইন্দুরকানীসহ ৭টি উপজেলায় রয়েছে ৮টি বাড়ি। আর জমি রয়েছে শত বিঘারও বেশি। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
জলবায়ু ট্রাস্টের টাকা খরচ করে নিজ নামে তৈরি করেছেন ইকোপার্ক। সেই পার্কে হরিণের খামার করে আটকে রাখা হয়েছে বনের শত শত হরিণ। অভিযোগ রয়েছে এই ইকো পার্কে হরিনের মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন ক্ষমতাবানদের।
এ বিষয়ে ট্রান্সপরেন্সি ইন্টার ন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর পিরোজপুর জেলা শাখার সভাপতি এমএ রব্বানী ফিরোজ বলেন, রাজনৈতিক দল ব্যবহার করে যারা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই তাদের প্রতিরোধে করা সম্ভব।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ফেলে পালিয়ে যায় মিরাজ-মাহারাজের মতো জেলার অসংখ্য দুর্নীতিবাজ নেতারা। সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন অবৈধ এ সব সম্পত্তি তদন্ত করে সরকারি সম্পত্তি হিসাবে ক্রোক করা হোক।
এসএটি/জেডএম